সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে : ১৪ মাসে ৭৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ৬৫ আহত ৬৭

আশীষ কুমার দে
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১
  • ৫৬০ পাঠক পড়েছে
  •  কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ২০০ কোটি টাকা

  • নকশায় ত্রুটিসহ অব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিপূর্ণ

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শুধু যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশেই ১৪ মাসে ৭৯টি দুর্ঘটনায় ৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের (২০২০ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ মার্চ পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সহজ ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলাই ছিল এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, একমুখী প্রশস্ত সড়ক, ধীরগতির গাড়ির জন্য আলাদা রাস্তা, ইন্টারচেঞ্জ- সবকিছুই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে খরচ হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তবে যাতায়াত সহজ হলেও নিরাপদ হয়নি বহুল প্রত্যাশিত এ মহাসড়ক। আর এ পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা দায় চাপাচ্ছেন নকশাগত দুর্বলতার ওপর। এক্সপ্রেসওয়ের ব্যারিয়ার সঠিকভাবে না বসানো, পর্যাপ্তসংখ্যক পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ না রাখাকেও দায়ী করছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১২ মার্চ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া এবং পদ্মা সেতুর ওপার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। তবে পদ্মা সেতু এখনো চালু না হলেও জানুয়ারি থেকেই এই সড়কে ব্যাপকহারে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত অংশের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। যেহেতু ফেরি পারাপার ছাড়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সরাসরি যাতায়াতের সুযোগ নেই, সেহেতু এক্সপ্রেসওয়েটির ঢাকা-মাওয়া অংশ অর্থাৎ ৩৫ কিলোমিটারই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে; যা ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছে অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা-মাওয়া অংশটি পড়েছে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নে; যা মুন্সীগঞ্জের হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই থানার তথ্য মতে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ মার্চ পর্যন্ত ১৪ মাসে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭৯টি। এতে ৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর আহত হয়েছেন ৬৭ জন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে পথচারী চাপা দেয়ার ঘটনা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এছাড়া বিধি ভঙ্গ করে ওভারটেকিং, ধীরগতির গাড়িকে পেছন থেকে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য গাড়িকে অথবা গাছের সঙ্গে ধাক্কা ও খাদে পড়ে যাওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে দুর্ঘটনার এসব কারণ জানা গেছে। তবে যে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটুক না কেনো, এই পরিসংখ্যান সঠিক নয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি। তারা বলছেন, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। দুর্ঘটনার কারণ : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণকাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হন। ঘটনার পর বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশসহ একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় এআরআই। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর একটি ছিল সড়ক বিভাজকের ব্যারিয়ার সঠিকভাবে স্থাপন না করা। এক্সপ্রেসওয়েটির যে জায়গায় সড়ক বিভাজকের কংক্রিটের অংশ রয়েছে, তার চেয়ে ১০ ইঞ্চি পেছনে স্টিলের ব্যারিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল বলছে, গাড়ি চালানোর সময় স্টিলের ব্যারিয়ার আর কংক্রিটের বিভাজকের ১০ ইঞ্চি পার্থক্য সব সময় চালকের পক্ষে লক্ষ্য করা সম্ভব নয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। এই ত্রুটির দায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, তদারককারী ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার ওপর চাপাচ্ছে এআরআই। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়েটিতে নতুন করে আরো ১৬টি ফুটওভারব্রিজ (পদচারী সেতু) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটেও একটি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে। যেসব জায়গায় বাস স্টপেজ রয়েছে, তার সবগুলোতেই ফুটওভারব্রিজ দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন। বিশেষজ্ঞর বক্তব্য : তবে উপরোল্লিখতি সমস্যাগুলোর সঙ্গে আরেকটি বড় সমস্যা যুক্ত করেছেন বুয়েটের এআরআই’র পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। সমস্যাটি হলো মহাসড়কের নকশাগত দুর্বলতা। এমনকি মহাসড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই বিশেষজ্ঞ। তাঁর ভাষায়, যদি এক্সপ্রেসওয়ে আমরা বানাই, তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের যেসব বৈশিষ্ট্য সেগুলো আমাদের রাখতে হবে। না হলে সেটা একটা সাধারণ মহাসড়কের মতো হয়ে যাবে। প্রথম কথা হচ্ছে, এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে রাখা যাবে না। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে এটি রাখা হয়েছে। ফলে বাসে উঠতে বা নামতে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে চলে আসছে যাত্রী। ঝুঁঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তখনই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580