বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশেষ ঠিকাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল হয়েছে। তাওহীদুল ইসলাম যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর থেকেই প্রতিটি বড় প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০২১ সালের আহবানকৃত ২০ টি দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় এর বেশী ভাগই বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে তার নিজস্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেট সদস্যদের পাইয়ে দেন। ইজিপি টেন্ডারে দুর্নীতির সুযোগ না থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট একটি কোড দেওয়া থাকে যার মাধ্যমে তিনি সবার রেট কোড জানতে পারেন। আর সহজভাবে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে সর্বনিম্ন কাজের রেট বলে দিতে পারেন। অনেকেই এ বিষয়ে জানতেও পারেন না।
আর ম্যানুয়াল টেন্ডার আহবানের ক্ষেত্রে আহবানকারী অফিস হয় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে কপোতাক্ষ নদ পুনঃ খনন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐ ২০ টি দরপত্রের এন ও এ (নোয়া) প্রদান করেন। নোয়া প্রদানের পর কার্যাদেশ হয়ে গেলে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার ক্যাপাসিটি কমে যায়। নির্বাহী প্রকৌশলী যশোর তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড কোং এর টেন্ডার ক্যাপাসিটি যেন কমে না যায় তাই প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের সিন্ডিকেট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড কোং এর টেন্ডার ক্যাপাসিটি যেনর অবনমন না হয় সে কারনেই মোটা টাকার বিনিময়ে পুর্বের কাজের নোয়া প্রদানের আগেই ২৪ জুলাই ২০২১ তারিখে পুনরায় ১০ টি দরপত্র আহবান করে এবং ৮ আগস্ট ২০২১ তারিখে পুর্বের কাজের নোয়া প্রদান করে। পি পি আর আইন অনুযায়ী ২৪ জুলাই ২১ তারিখের আগেই আমিন এন্ড কোং নামীয় প্রতিষ্ঠানটিকে পুর্বের কাজের নোয়া প্রদান করলে টেন্ডার ক্যাপাসিটি না থাকার কারণে পরবর্তী দরপত্রগুলোতে প্রাথমিক বাছাইয়ে তারা বাদ পড়ে যেতো। আমিন এন্ড কোং এর টেন্ডার ক্যাপাসিটি ৬৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা হলেও তাওহীদুল আলম গং ছলচাতুররি মাধ্যমে তাদের ১ শত ৩০ কোটি টাকার কাজ দিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আমিন এন্ড কোং যেন কাজগুলো করতে পারে তাই পরিকল্পিতভাবে কার্যাদেশের মেয়াদ ২ বছরে করে দিয়েছে। যার ফলে অফিসের ভাষা অনুযায়ী তাদের টেন্ডার ক্যাপাসিটি দ্বিগুন হয়েছে। অন্য কেউ যেন কাজ না পায় এজন্য প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী যশোর বিভিন্নভাবে ফাক-ফোকর বের করে টাকার বিনিময়ে আমিন এন্ড কোং কে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরেকটি প্রকল্প ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দুরীকরণ’ প্রথম পর্যায় কাজে আমিন এন্ড কোং দায়তলা খাল পুনঃ খনন ৪ টি প্যাকেজে ১৫ কিলোমিটার খননের কার্যাদেশ পেয়েছিল।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না করার কারনে কার্যাদেশের মেয়াদ জুন ২০২১ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়। আমিন এন্ড কোম্পানীর নিকট ১৩০ কোটি টাকার নোয়ার বিপরীতে ৬ শতাংশ হারে কমিশন নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এছাড়াও ৭০ কোটি টাকার আরো ৭ টি কাজে যোগ্যতা না থাকলেও ১০ শতাংশ হারে ঘুষ দিয়ে কাজ পায় ৪ টি প্রতিষ্ঠান। অথচ নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহবান করে কার্যাদেশ প্রদান করলে কাজের মান ও সময় ঠিক থাকতো বলে সাধারন ঠিকাদাররা জানান। অভিযোগের বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম আজকের সংবাদকে জানায়, অভিযোগকারী নিকট আমি লিখিত নিয়েছি। তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।