পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়লেও উদ্বোধন করা হবে ২০২২ সালের জুনে। আর এ মেয়াদ বাড়ার কারণে বাড়বে না খরচও। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের বাস্তব কাজ আগের বেঁধে দেওয়া ২০২২ এর জুনেই শেষ হবে। তবে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের সময়সহ প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। সেতু বিভাগের সচিব বলছেন, করোনার কারণেই বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।
প্রতিকূল আবহাওয়া, গুজব ও মহামারি করোনাভাইরাস সংকট উপেক্ষা করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। সেতু প্রকল্পের কাজ এখন একেবারে শেষের পথে। ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে মূল সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর এবার যান চলাচলের জন্য উপযোগী হয়েছে উঠছে কোটি মানুষের স্বপ্নের সেতু।
জুলাই মাস পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর কাজের আর বাকি মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশের কম।
মূল সেতুর কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আগামী ১১ মাসের মধ্যে মূল সেতুর বাকি কাজ প্রায় এক হাজার ২২৭ কোটি টাকা দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত জানান।
সেতুর প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার ৮৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর মূল সেতু কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ২৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
সেতু প্রকল্পের আওতায় নদী শাসনের অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। নদী শাসন কাজের চুক্তিমূল্য আট হাজার ৯৭২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ছয় হাজার ৭১৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
প্রকৌশল বিভাগ আরও জানায়, মূল সেতুর মধ্যে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাব বসানো হবে। এরইমধ্যে দুই হাজার ৮৩১টি স্লাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। আর পাঁচ হাজারটি শেয়ার পকেটের মধ্যে এক হাজার ৯৭৯টি এবং ১২ হাজার ৩৯০টি প্যারপেট ওয়ালের মধ্যে তিন হাজার ৬০৬টি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া মাওয়া ও জাজিরার ভায়াডাক্টে ৪৩৮টি সুপারটি গার্ডারের মধ্যে ৪৩৮টি ওবং ৮৪টি রেলওয়ে আই গার্ডারের মধ্যে ৮৪টিই স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুর মোট ৪১টি ট্রাস রয়েছে, যার সবগুলো ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ১৫০ মিটার বা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
এদিকে, সেতুর সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শতভাগ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪৯৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ চার হাজার ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অন্যান্য (পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট ও আয়কর, যানবাহন, বেতন ও ভাতাদি এবং অন্যান্য) খাতে বরাদ্দ দুই হাজার ৮৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।