বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

মহেশখালী উপকূলে সুফল প্রকল্পে হরিলুট

জাফর আলম, কক্সবাজার:
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১
  • ৯৩০ পাঠক পড়েছে

ফরেষ্টারের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের ভাষ্য

সুফল প্রকল্প নিয়ে চলছে নয় ছয়। টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ১৫০২ কোটি টাকা কোথায় কিভাবে ব্যায় হচ্ছে, কাজের অগ্রগতি কি? তাও জানেন না খোদ প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায়। কক্সবাজার মহেশখালী উপকূলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সুফল প্রকল্পের বনায়ন বিফলে শীর্ষক একটি প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩ জুলাই সমগ্র কার্যদিবসে চেষ্টা করেও এই প্রকল্প পরিচালকের ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ করার পর তাকে পেলেও তিনি জানেন না মহেশখালীতে সফল প্রকল্পের কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা’র সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান। সে থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল কিংবা সরকারী ল্যান্ড ফোনটি না ধরায় মোট বরাদ্দকৃত টাকার সঠিক তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘মহেশখালী উপকূলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সুফল’ প্রকল্পের বনায়ন বিফলে: পাহাড় হারাচ্ছে প্রাণবৈচিত্র।” শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের অধীন মহেশখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার বড়ুয়া (ফরেষ্টার) গত ১ জুলাই তারিখে স্বাক্ষরিত পত্র নং ২২-০১-০০০০.৭৬৩.৩৮.০০.২১-২৮১, তারিখ ০১/০৭/২০২১ মূলে এক প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করেন। প্রতিবাদ লিপিতে তিনি প্রকাশিত সংবাদটি ৪টি প্যারায় ৪ ক্রমিকে বর্ণনা করত: সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যাপারে সাফাই গেয়ে বলেছেন বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কোন ধরণের অপরাধের সাথে বা দুর্নীতির সাথে জড়িত নন।

প্রতিবেদেকের ভাষ্য: প্রতিবাদ লিপির ব্যাপারে প্রতিবেদকের বক্তব্য এই যে, প্রথমেই বলতে হয় প্রতিবাদকারী একজন ফরেস্টার সরকার প্রদত্ত পদ মর্যাদায় তিনি ৩য় শ্রেণীর পদের একজন বন রক্ষক। বন বিভাগের যে কোন রেঞ্জে নিয়ম অনুযায়ী ফরেস্ট রেঞ্জার রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। ফরেস্ট রেঞ্জারের স্বল্পতার কারণে বর্তমানে বন বিভাগের অনেক রেঞ্জই ফরেস্টার (বন রক্ষক) দেরকে ফরেস্ট রেঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসাবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনার আছে যে, বন প্রহরী, ফরেস্টার, ডেপুটি রেঞ্জার, ফরেস্ট রেঞ্জার ইত্যাদি পদের কোন ব্যক্তি যখন কোন দ্রব্য পরীক্ষা করবেন বা ছাড়পত্র প্রদান করবেন এবং কোন চিঠিপত্র লিখবেন অবশ্যই তার পদবী উল্লেখ করবেন। কিন্তু ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া স্বাক্ষরের পত্রে তিনি যে পোষ্টে আছেন তা ফরেস্ট রেঞ্জারের পোষ্ট। উক্ত পোস্টে তিনি একজন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা পদবিতে ফরেস্টার। প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষরের সময় তিনি তার পদবি এবং ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা কোনটিই না লিখে সত্য গোপন করে নিজেকে রেঞ্জার পদে পদবী উল্লেখ করে নিয়ম শৃংখলা পরিপিন্থী কাজ করেছেন। সঙ্গত কারণেই বলতে হয় তিনি সত্য গোপন করে শৃঙ্খলা পরিপন্থিী কাজ করেন। তার লেখা প্রতিবাদ লিপির কথাগুলো কতটুকুই বা সত্যি হতে পারে?

১ নং ক্রমিকে ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া বলেছেন মহেশখালী রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে সুফল প্রকল্পের আওতায় লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বিভিন্ন ধরণের বাগান যথাযথ ভাবে সৃজন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরেও লক্ষমাত্র অনুযায়ী বাগান সৃজনের কাজ সমাপ্তির পথে। যা যথারীতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের কথা বলেছেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে বা কোন কর্মকর্তা তা তিনি বলেননি এবং পরিদর্শনকালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্ল্যান্টেশন জার্নাল বা আদেশ বইতে কি মন্তব্য করেছেন তা তিনি বলেন নি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায় সৃজিত বাগান সফল নাকি আংশিক সফল নাকি ব্যার্থ? নিরপেক্ষ যৌথ তদন্ত অর্থাৎ সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগের উর্ধ্বতন সৎ কর্মকর্তা সমন্বয়ে তদন্ত টিম গঠনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী কত হেক্টর বাগান করা হয়েছে। রোপিত চারার হিসাবে বাগানের মোট পরিমান ঠিক আছে কি না, নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিকভাবে নির্দেশিত প্রজাতির চারা বাগানে রোপন করা হয়েছে কি না? সঠিকভাবে চারা রোপনের জন্য গর্ত করা এব যথাযথ ভাবে সার প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা? বাগানের নার্সারীতে উত্তোলিত চারার পরিমাণ সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে উত্তোলন করা হয়েছে কিনা? বন বাগান সৃজনে শ্রমিকদের মজুরী যথাযথ ভাবে নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে কিনা? জবরদখল কারীদেরকে কোন মজুরী না দিয়ে জবরদখলে থাকার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের দ্বারা কোন মতে বাগান সৃজন করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি সত্য বেড়িয়ে আসবে।

২নং ক্রমিকে ১২ নং মহেশখালী পাহাড় মৌজায় অবৈধভাবে বসতি ও পান বরজ জবরদখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করত: যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার মহোদয়ের দপ্তরে উচ্ছেদ প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছর ১৭.৭০ একর বনভূমি জবর দখল মুক্ত করত: বাগান সুজন করা হয়েছে। যার কার্য্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া বনভূমি জবরদকলকারীদের কর্তৃক বিশাল বনভূমি দখলের পরিমাণের কথা কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে জবরদখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করত: জেলা প্রশাসকের দপ্তরে উচ্ছেদ প্রস্তাব দাখিলের কথা বলে মূল বিষয় থেকে সরে গেছেন। ১৭.৭০ একর বনভূমি জবর দখল মুক্ত করে বাগান সৃজনের বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তে গুপ্ত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

৩নং ক্রমিকে অবৈধ পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৪টি ট্রাক্টর জব্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয় কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মহেশখালী মহোদয়ের কোর্টে বন মামলা দায়ের ও ১টি ড্রাম্পার জব্দ অবস্থায় থাকার কথা বলেছেন ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া। বন রেঞ্জ এলাকায় প্রতিনিয়ত সংঘটিত বন অপরাধের তুলনায় তাহার কর্তৃক বন অপরাধ উৎঘাটন অত্যন্ত অপ্রতুল। সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ সমন্বয়ে যৌথ তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।

৪নং ক্রমিকে বলা হয়েছে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কোন ধরনের অপরাধের সাথে বা দুর্নীতির সাথে জড়িত নহেন। এক্ষেত্রে ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়া তার অধীনস্থ রেঞ্জের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এবং নিজের কথা না বলে তিনি পুরো দায়িত্ব নিয়ে বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কোন ধরনের অপরাধের সাথে বা দুর্নীতির সাথে জড়িত নহেন বলে প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করেছেন। ইহা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? প্রতিবাদ লিপির এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদক অত্যন্ত গভীরে গিয়ে অধিকতর তদন্তে ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়ার অধীন রেঞ্জের একজন সহযোগীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবং নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন যে মহেষখালী রেঞ্জের বাগান সৃজনে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি, বনভূমি জবর দখলে দুর্নীতি। জবর দখল কৃত পান বরজ মালিকদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ আদায়, পাহাড় কর্তন ইত্যাদি অবৈধ কাজগুলি অব্যাহত ভাবে চলছে। পান বরজ মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের অর্থে বাগান বানাতে বাধ্য করে ঐ বাগান সমূহ সুফল প্রকল্পের অর্থায়নে সৃজিত বলেও দেখানো হচ্ছে। ফলে মহেশখালী এলাকায় সুফল প্রকল্প প্রদত্ত ৯ কোটি টাকার সিংহ ভাগ আত্নসাতের ঘঠনা গটেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও অজ্ঞাত কারনে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

ফরেষ্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়ার ভুলে ভরা প্রতিবাদ লিপিতে দৈনিক আজকের সংবাদের সম্পাদকের বরাবরে প্রেরিত প্রতিবাদ লিপিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, বর্ণিত বিষয়ে দৈনিক ট্রাইবুনাল পত্রিকার ইং ৩০/৬/২০২১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদটির বিষয় দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। একজন সরকারী দায়িত্ববান ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার এহেন ভূলের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন বলেও প্রতিবেদক মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580