নারায়ণগঞ্জের আগুনে পুড়ে যাওয়া সেজান জুস কারখানার সামনে এখনও অপেক্ষা স্বজনদের। নিখোঁজ শ্রমিক রহিমাকে কারখানার সামনে খুঁজে ফিরছেন তার পরিবার। স্বজনদের দাবি, আগুন লাগার পর শ্রমিকদের তালাবদ্ধ রেখে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন তারা।
কিশোরগঞ্জের রহিমা, কাজ করতেন পুড়ে যাওয়া এই কারখানার চারতলায়। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকালে আগুন লাগার সময় ছিলেন কারখানায়। তারপর থেকে আর খোঁজ নেই তার।
আগুন লাগার পর থেকেই স্বজনেরা হন্নে হয়ে খুঁজেছেন নানা হাসপাতালে। কোথাও না পেয়ে রহিমাকে পাওয়ায় আশায় শনিবার (১০ জুলাই) রাতেও কারখানার বাইরে স্বামী, সন্তান ও পিতাসহ স্বজনদের এই অপেক্ষা।
রহিমার বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘ওপরেই উঠতে পারেনি, বাইরেও বের হতে পারেনি। গেট দুইটাই বন্ধ ছিলো। লাশ খুঁজেছি, ঢাকায় গিয়েও, কিন্তু পাইনি। কাগজপত্র নিয়েছে, পরীক্ষা করে জানাবে। কারখানার গাফিলতির কারণে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
রহিমার ভাগ্নি ও সহকর্মী রোজিনা জানান, ‘উনি ছিলেন ৪ তলার ভেতরে। গেট যদি খোলা থাকতো তাহলে নিচ দিয়ে বের হতে পারতো। হাত-পা ভাঙলেও লাশটা তো পেতাম।’
স্বজনেরা বলছেন, সেদিন বেতন দেয়ার কথা ছিলো, তাই আগেভাগেই কারখানায় গিয়েছিলেন রহিমা।
রহিমার স্বামী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘তখন ছুটোছুটি করে এসে দেখলাম গেট বন্ধ। তখনও ৪ তলার ভেতরে আগুন ঢুকেনি, হাত-পা ধরে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি। আপনারা যদি গ্রিলগুলোও ভেঙে দেন, দড়ি দিয়ে যদি বের করা যায়। আমরা চেষ্টা করি। আমাদের লোকগুলোর জীবনগুলো বাঁচান। তারা কোন তোয়াক্কা করেনি। তারপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন দেয়। অফিসাররা পর্যন্ত বলার পরও তারা গেট খুলেনি। তারা যড়যন্ত্র করে পুড়িয়ে মেরেছে। এটা কোন দুর্ঘটনা নয়।’
রহিমার ছেলে মো: আরিফ জানান, ‘আমাকে বলেছিলো ডিউটি শেষে এসে আমার জন্য পিঠা বানাবে”
স্বজনদের দাবি, আগুন লাগার পর শ্রমিকদের তালাবদ্ধ করে রেখে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে কারাখানাটিতে পুড়ে যাওয়া অর্ধশত পোড়াদেহ। স্বজনদের চাওয়া, অন্তত রহিমার মরদেহটি যেন পান তারা।