পবিত্র আশুরার দিনে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় সংঘটিত বোমা হামলা বিচার ৬ বছরেও খুব বেশি এগোতে পারনি রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, দুই আসামির বয়স জটিলতা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সবকিছু থমকে রয়েছে। তবে তারা আশা করছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারবে।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সরোয়ার খান জাকির বলেন, মামলাটি ২০১৮ সালে অন্য আদালত থেকে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়ে আসে। এখন পর্যন্ত মামলাটির ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে জাহিদ হাসান নামে এক আসামি নাবালক বলে তার আইনজীবী অধিকতর তদন্ত করে পৃথক অভিযোগপত্রের আবেদন করলে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ মে তদন্ত কর্মকর্তা আসামি জাহিদ হাসানকে নাবালক দেখিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ২৯ জুন বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য শিশু আদালতে বদলির আদেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, একই ভাবে মাসুদ রানা নামে আরেক আসামি নাবালক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্রের আবেদন করেন তার আইনজীবী। এরপর বিচারক আবেদন করে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানাকে নাবালক দেখিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারের জন্য শিশু আদালতে বদলির আদেশ দেন। বর্তমানে আসামি জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানার শিশু হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে এবং বাকি আট আসামির বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে গোলাম সরোয়ার খান জাকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত এই দুই আসামির বয়স জটিলতা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি মামলাটি খুব শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে নিষ্পত্তি করতে পারব।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, এ মামলাটি কেমন তদন্ত হলো যে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর আসামির বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রকৃতপক্ষে এই আসামিরা ঘটনার সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে দায়সারা তদন্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক শফিউদ্দিন ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগপত্রে ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। বর্তমানে মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মামলায় আসামিা হলেন, কবির হোসেন, রুবেল ইসলাম, আবু সাঈদ, আরমান, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ, শাহ জালাল, ওমর ফারুক, চাঁন মিয়া, জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানা। জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানা কিশোর হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।