বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’। এই সংগঠনের মতো অন্য মহলেও উঠেছে অপসারণের দাবি। তারা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ফেরুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫২ কর্মদিবসের মধ্যে ১ হাজার ১১৫ দিনই অনুপস্থিত ছিলেন ভিসি কলিমউল্লাহ।’
পাশাপাশি উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ঢাকায় বসে শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করছেন— এমন অভিযোগ তুলে গতকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল।
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকায় বসে সংবাদ সম্মেলনে করে মিথ্যাচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী, এবং ইউজিসিকে জড়িয়ে দম্ভোক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে অপসারণ দাবি
শুক্রবার ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ঢাকা রির্পোর্টাস ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ যে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দলকে জড়িয়ে নিজের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে দম্ভোক্তি করেছেন।
এতে বলা হয়, কলিমউল্লাহ ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘তিনি যা করেছেন তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী করেছেন’। প্রধানমন্ত্রী তো তাকে এসব প্রকল্পে দুর্নীত-অনিয়ম করতে বলেননি, উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে আর্থিক হরিলুট করতে বলেননি। সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ তিনি যোগদানের পর থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই অনুপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উপাচার্য নিজের দুর্নীতির দায় অন্যের ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী, ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত দলকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, দুষেছেন। তিনি নিজের দুর্নীতির উত্তর না দিয়ে আগের উপাচার্যরা কী করেছেন তা উল্লেখ করে নিজের দায় এড়িয়ে গেছেন, নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তিনি অনেক মিথ্যাচার করেছেন। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।
উপাচার্য কলিমউল্লাহ একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে চলেছেন উল্লেখ করে বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্তে ‘শেখ হাসিনা হল’সহ বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণে উপাচাযের্র দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এসব অপকর্মের কারণে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। এজন্য কলিমউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বে থাকার নৈতিক মর্যাদা হারিয়েছেন।
এদিকে গতকাল উপাচার্যের করা সংবাদ সম্মেলনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি ও সরকারের বিভিন্ন উচ্চ ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যাচার ও বিরূপ মন্তব্য করায় উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’।
এছাড়া একই অভিযোগ এনে বেগম উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল ও উপাচার্যের একটি কুশপুতুল দাহ করেছে।