দখলবাজরা বনভূমিতে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে তারা সরকারি বনভূমির গাছ ও পাহাড় কেটে যথেষ্ট ক্ষতি ডেকে এনেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পাশাপাশি জীববৈচিত্রও ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশের এই বিপন্নতা নিয়ে বন বিভাগ একেবারেই উদাসীন। বনজমি দখলদারদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ জিরো টলারেন্সে থাকার ঘোষনা দিলেও এ ঘোষনা তেমন কার্যকর হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও’র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে অবাধে বনভূমি দখল। নিত্যনতুন পদ্ধতিতে বনের জমি জবর দখল হচ্ছে। কোথাও কোথাও বনভূমি কেটে সমতল করে পাকা দালান থেকে শুরু করে পোলট্রি ফার্ম ও নানা স্থাপনাসহ বনভূমির প্রায় সিংহ ভাগ জায়গায় দখলবাজরা নিয়মিত পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ ও পাহাড়ি মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করছে।লক্ষ লক্ষ মাসোহারা নিয়ে চলছে অবৈধ করাত কল।
কক্সবাজারের ঈদগাঁও’র বিভিন্ন এলাকায় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় অর্ধশত করাত কল চলছে রমরমা অবৈধ ব্যবসা। এসব মিলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ। অনুমোদনহীন এসব করাত মিল থেকে বন বিভাগের ঈদগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন নিয়মিত মাসোহারা আদায় করায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। রেঞ্জ অফিস থেকে ডিএফও অফিস পর্যন্ত যায় এসব ঘুষের টাকা।
জানা যায়, বিভিন্ন বনাঞ্চলের হরেক প্রজাতির কাঠ গিলে খাচ্ছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও’র স্থাপিত অবৈধ করাত কলগুলো দিবারাত্রি চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। এসব গাছ রাতের আধারে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এনে চিরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে স্থানীয় বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরে কোন প্রকার করাতকল বসানোর নিয়ম না থাকলেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১/২ কিলোমিটার ভিতরে বসানো হয়েছে। এমনকি কয়েকটি স’মিলের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণ আইন অমান্য করে ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।স্থানীয়রা জানান,কয়েকটি করাতকলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাঠ চেরাই হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবত বনবিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্টদের কোন ধরণের অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এসব করাত কলের মালিকানায় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকায় সহজে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।স্থানীয় বনদস্যু ও বনবিভাগের কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ইন্ধনে করাত কলের মালিকরা রাতের আধারে প্রতিদিন গাছ পাচার করে নিয়ে আসছে। ঈদগাঁও থেকে সামান্য দুরে হওয়ায় বনাঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি কাঠ চিরাই হচ্ছে এ ঈদগাঁওতে।কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও এবং ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ ডিএফওকে ম্যানেজ করেই বনের জমিতে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ নাঈম নামের এক রোহিঙ্গা। শুধু রোহিঙ্গা নাঈম নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলছড়ি ও ঈদগাঁও রেঞ্জের সীমানায় গড়ে তোলা হচ্ছে বহতল ভবনটি। দুই রেঞ্জের সীমানা নিয়ে রশি টানাটানির সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে রোহিঙ্গা নাঈমের পরিবারটি। এই নাঈম পরিবারটি ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট নেওয়ায় তার পরিবারের ১৩ জন রোহিঙ্গা বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৭ জুন দুদক মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করা হয়।অভিযোগে জানা যায়, পাহাড়খেকো রোহিঙ্গা মো. নাঈমুল ইসলাম সিন্ডিকেট কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের নাপিতখালী বনবিট ও ঈদগাঁও রেঞ্জের ভোমরিয়া ঘোনা বনবিটের সীমানায় আওলিয়াবাদ দারুস সালাম মাদ্রাসা গেইটে গত কয়েক মাস আগে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে। শুরু থেকেই বনবিভাগকে ম্যানেজ করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠে আসছিল।
অভিযোগে প্রকাশ, নাপিতখালী বনবিটের অধীনে ২০০৭-২০০৮ সালে সৃজিত সামাজিক বনায়নের ১ নম্বর প্লটেই নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বনবিভাগের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়টি উঠে আসায় ম্যানেজের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাপিতখালী ও ভোমরিয়াঘোনা বনবিটের মধ্যে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। রহস্যজনক কারণে দুই বনবিটের কোন বনবিট কর্মকর্তাই অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে রোহিঙ্গাকে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজে উৎসাহ দেন বলে অভিযোগ। জীববৈচিত্রও ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশের এই বিপন্নতা নিয়ে বন বিভাগ একেবারেই উদাসীন। বনকর্তাদের গুটিকয়েক ভূমিদস্যুদের সাথে আতাত করায় বনজমি দখলের হিড়িক আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ। চিহ্নিত এই বনভূমি দখলবাজরা ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিলেও সংশ্লিষ্ট বনকর্তারা তাদের আইন প্রয়োগে রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, বনভুমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের ঘটনা একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ করে বিট চিহ্নিত করণ ও সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত আসে। শেষ পর্যন্ত তাও থমকে গেছে। জীববৈচিত্রও ধ্বংস হচ্ছে।পরিবেশের এই বিপন্নতা নিয়ে বন বিভাগ একেবারেই উদাসীন। বনজমি দখলদারদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ জিরো টলারেন্সে থাকার ঘোষনা দিলেও মাঠপর্যায়ে এ ঘোষনা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। বনকর্তাদের গুটিকয়েক ভূমিদস্যুদের সাথে আতাত করায় বনজমি দখলের হিড়িক আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।
চিহ্নিত এই বনভূমি দখলবাজরা ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিলেও সংশ্লিষ্ট বনকর্তারা তাদের আইন প্রয়োগে রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।সুত্রে জানা গেছে, বনভুমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের ঘটনা একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ করে বিট চিহ্নিত করণ ও সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত আসে। শেষ পর্যন্ত তাও থমকে গেছে।বনবিভাগের একটি সুত্রে জানা গেছে, ওই বনভুমির সীমানা নির্ধারনে সহকারী বন সংরক্ষক ফুলছড়ি (এসিএফ), দুই রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ বনবিভাগের সার্ভেয়ার রবিউল আলম সরেজমিনে বনভুমি পরিমাপের কথা ছিল।
একাধিকবার সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্ত কোন এক অদৃশ্য কারণে বনকর্তারা ব্যস্ততা দেখিয়ে পরিমাপ না করায় সীমানা বিরোধ সার্ভে অমিমাংসিত রয়ে গেছে।সুত্রে জানা গেছে,কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও এবং ফুলছড়ি রেঞ্জে রয়েছে অবৈধ শতাধিক ফার্নিচারের দোকান। সেখানে সেগুন,মেহগনি, জাম,শালসহ বনের মূল্যবান গাছ দিয়ে তৈরি করা হয় ফার্নিচার। এদিকে বনের মূল্যবান গাছ পালা নিধন হচ্ছে অপরদিকে পরিবেশের উপর চরম প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।কয়েকজন ফার্নিচার দোকানির সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাসে দুহাজার টাকা করে প্রতি দোকান থেকে বনবিভাগের খোদ রেঞ্জ অফিসারকে দিতে হয়।এসব টাকা ডিএফওকে দিতে হয় বলে মাসোহারা গুলো নেয় বলে জানিয়েছেন তারা।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দখলবাজরা নিয়মিত পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ ও পাহাড়ি মাটি এবং বাগানের গাছ অবৈধভাবে বিক্রিসহ নানা বাণিজ্যিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্র জানান,ঈদগাঁও,ভোমরিয়াঘোনা,ফুলছড়ি রেঞ্জ এলাকার একটি সিন্ডিকেট ও দখলবাজ চক্র বনভূমি দখল করে তা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছে, আর ফায়দা লুটছে খোদ রেঞ্জ কর্মকর্তা থেকে ডিএফও।বনভুমিতে পাকা দালান নির্মাণ করতে গিয়ে তারা বনায়নের গাছ ও পাহাড় কেটে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে বলে স্থনীয়দের অভিযোগ।এবিষয়ে ঈদগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বনভুমি দখল কাজে আমাদের কোন যোগসাজশ নেই। যেখানে বনভুমি দখলের খবর পাই, সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।