স্টাফ রিপোর্টার : উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন লন্ডনের এক আদালত। অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিচারক এ সংক্রান্ত আবেদনটি নাকচ করে দেন। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে। খবর বিবিসির
২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ গোপন তারবার্তা ও নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে উইকিলিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। সেই গোপন তারবার্তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন কূটনীতিকদের নানা তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ভীষণ বিপাকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তাদের দাবি, এসব নথি ফাঁস করে তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন, যা অনেকের জীবন বিপন্ন করছে।
এরপর থেকে অ্যাসাঞ্জ প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করছেন। তিনি বলেছেন, মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ে জেলা জজ ভানেসা বারিটসার অ্যাসাঞ্জের ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং আত্মঘাতী চিন্তা বিষয়ক যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘তার সামগ্রিক ছাপ হতাশাগ্রস্ত। কখনও কখনও হতাশা মানুষকে তার ভবিষ্যতের বিষয়ে ভীত করে তোলে।’
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার মক্কেলের ভয়, যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে মার্কিন সরকার জানিয়েছে, এই সাজা চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার ১৮ অভিযোগ করেছে, যার মধ্যে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত সংবেদনশীল গোপন তথ্যের জন্য মার্কিন সামরিক ডাটাবেজ হ্যাক করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। ওইসব ডাটা তখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, ওইসব তথ্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে অপব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ করেছে।
আর মার্কিন প্রসিকিউটররা বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি ফাঁসে অনেকের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। এ কারণে অ্যাসাঞ্জ ইউকে থেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক- এটা চায় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগারে আছেন।
অ্যাঞ্জাসকে নিজেদের জিম্মায় নিতে শুরু থেকেই নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছে মার্কিন সরকার। যদিও তাদের সেই তৎপরতায় এ পর্যন্ত সফলতা আসেনি। এর আগে দুই নারীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১০ সালের আগস্টে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সুইডেনের আদালত। শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন অ্যাসাঞ্জ।
এরপর একই বছরের ডিসেম্বরে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। পরে জামিন পান তিনি। পরে ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে বলা হয়, অভিযোগের বিষয়ে জেরা করার জন্য অ্যাসাঞ্জকে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে হবে। এ অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুন লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয় চান অ্যাসাঞ্জ। একই বছরের আগস্টে ইকুয়েডর সরকার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আবেদন মঞ্জুর করে।
অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান শুরুর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের মে মাসে সুইডেনের পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে থাকা ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। তারা জানায়, আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে যত দ্রত সম্ভব বিচারিক আদালতে হাজির করা হবে।