আগামী বছর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৪ মাসে দেশেষ রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। এছাড়া সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৫ হাজার টন সার ক্রয় এবং পুলিশের জন্য ১১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণে ক্রয় প্রস্তাব রয়েছে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে র্ভাচুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভের টাকা দেশে ব্যবহারের জন্য উপায় খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিক নির্দেশনা রয়েছে। সাংবাদিকরে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ভাল প্রকল্পগুলোতে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করা গেলে নিজের টাকা নিজের ঘরে থাকলো। আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভের টাকা বেসরকারীখাতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কোন অবস্থান নেই। এটি পরিকল্পিতভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্যিকভাবে বেনিফিট হই, সেভাবে কাজে লাগানো হবে।
আট ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আটটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এর রমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২টি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি কওে প্রস্তাবনা ছিল।অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৬৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪ হাজার ১৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ২২৪ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ১২ টাকা এবং ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) ও দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৪০ কোটি ৪০ লাখ ১৯ হাজার ১৮৬ টাকা। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ প্রকল্পের একটি লটের আওতায় সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্স এলাকায় ১টি আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পাদনে পদ্মা এ্যাসোসিয়েট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭০ টাকা।
প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, এ প্যাকেজের আওতায় ১৫তলা আবাসিক ভবন, প্রতি তলায় ৬৫০ বর্গফুট বিশিষ্ট ১২টি ইউনিট, অভ্যন্তরীণ স্যানিটারী ও বৈদ্যুতিকরণ, ভূ-গর্ভস্থ জলাধার, গভীর নলকূপ, পাম্প মোটর, রাস্তা, কম্পাউন্ড ড্রেন ও পিএবিএক্স সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। অপর একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকা গুলশান এলাকায় ২টি বেইজমেন্টসহ ১৪তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় পূর্ত কাজ সম্পাদনে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে হোসেন কন্সট্রাকশন এবং আমানত এন্টার প্রাইজ। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৬ টাকা। এ প্যাকেজের আওতায় ২টি বেইজমেন্টসহ ১৪ তলা ভবন, ৪টি ইউনিটের প্রতিটি ২ হাজার ২০০ বর্গফুট এবং ২টি ফ্লোরে ২টি ডুপ্লেক্সসহ ৪৮টি ফ্ল্যাট অভ্যন্তরীণ রাস্তা বা গেটসহ সীমানা প্রাচীর, কম্পাউন্ড ড্রেন এবং গার্ড শেড নির্মাণ করা হবে।
এক লাখ ৫ হাজার টন সার কেনা হবে ॥ সৌদি ও কাতার থেকে ১৭১ কোটি ৯১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৪ টাকা ব্যয়ে ৭৫ লাখ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার এবং কাফকো থেকে ৬৩ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬২ টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ সংক্রান্ত ৪ ক্রয় প্রস্তাবে এক লাখ ৫ হাজার টন সার ক্রয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৮৬ টাকা। ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) কাতারের মুনতাজ থেকে ৪র্থ লটে ২৫ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৬৮৭ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অপর এক প্রস্তাবে বিসিআইসিকে কাতারের মুনতাজ থেকে ৫ম লটে ২৫ হাজার টন বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার ৫৬ কোটি ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৭ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিসিআইসিকে সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন থেকে ২৫ হাজার টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৫৬ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৬৩ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬২ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ ২০২১ পঞ্জিকাবর্ষে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ১৩ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রুড অয়েল) আবুধাবীর এডিএনওসি এবং সৌদি আরবের সৌদি আরামকো থেকে ৫ হাজার ২০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন বিআরটিএ’র আওতায় ৫ বছর মেয়াদে ঢাকা মেট্রো-১ অফিসে ১২ লেন বিশিষ্ট ভিআইসি (ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার) স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, হার্ডওয়ার ইত্যাদি সরবরাহ, স্থাপন, পরিচালনা, মেইন্টেনেন্স ও মেয়াদ েেষ হস্তান্তরের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কম্পিটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে ১০৫ কোটি ২২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৬ টাকায় নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়।