নতুন শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী আগামী বছর (২০২৩ সাল) থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে হিসেবে শুক্র ও শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। শনিবার বিকালে নির্বাচিত ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম পাইলটিংয়ের জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই কথা জানান।
অনুষ্ঠানে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। এই কার্যক্রমে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে যুক্ত ছিল। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। ছুটি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখনই সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটি আছে। মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিকে কোথাও কোথাও এখন দুই দিন আছে। আমরা যখন কারিকুলামের রূপরেখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম তখনই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় দুই দিন ছুটি করতে চাই। পাঁচ দিন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তারপর দুই দিন ছুটি থাকা দরকার।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকে একদিন ছুটি প্রস্তাব করেছিল। প্রধানমন্ত্রী তখন প্রাথমিকের পক্ষ নিয়ে বললেন, তাদেরও দুই দিন লাগবে। আমরা ঠিক করেছি সবারই দুই দিন ছুটি হবে। এখন যারা ট্রাইআউটে (পাইলটিংয়ে) যাবে তাদের দুই দিন ছুটি থাকবে। আশা করি ২০২৩ সাল থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন থাকবে।’
মন্ত্রী বলেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামে পাঠদান করা হবে। এটা সফল হলে ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণি থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। আর ২০২৪ সাল থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়িত হবে। দীপু মনি বলেন, ২০২৩ সালে যে দুটি শ্রেণির বইগুলো আমরা তৈরি করবো সেগুলো আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরও ভালো হবে। এখন যে বইগুলো আমরা তৈরি করেছি তার থেকে আরও সুন্দর ও ভালো করবো।
নতুন কারিকুলামের পাঠ্যপুস্তক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার প্রচুর চেষ্টা ছিল এটুকু বলতে পারি। আমি বিশেষজ্ঞদের সবাইকে দেখেছি তারা সকাল থেকে শুরু করে রাত নয়টা, দশটা-এগারোটা পর্যন্ত তারা পরিশ্রম করেছেন। আপনাদের এত পরিশ্রমের ফসল এই বইগুলো।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একসঙ্গে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে বিশাল আকারের বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত বড় পরিবর্তন আনতে হবে। সমস্ত সরঞ্জাম দিতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, ল্যাবরেটরি অ্যাসিটেন্ট নিয়োগ করতে হবে। এটা একটি বড় বিনিয়োগ। শিক্ষায় আমাদের বড় বিনিয়োগ করতেই হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন যে শিক্ষাক্রম যেখানে আমাদের উদ্দেশ্য হলো শুধু জ্ঞান নয়, জ্ঞানের সঙ্গে দক্ষতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ এগুলোর সবকিছুর সমন্বয় ঘটানো। শিক্ষার্থীরা নিজেরা পড়ে পড়ে শিখবে এবং তার মধ্য দিয়ে তারা দক্ষ মানুষ হবে। নিজেরা চিন্তা করতে শিখবে। এতে তাদের চিন্তার জগত প্রসারিত হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে শিখবে, সমাধান করতে শিখবে।’ এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, এনসিটিবি সচিব নাজমা আক্তার, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান প্রমুখ।