আট বিভাগে দেশের ৮ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পল্লীবন্ধু- ২০২১ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাদের হাতে এই পদক তুলে দেন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এই পদক প্রদান করা হল দলটির পক্ষ থেকে।
প্রয়াত হুসেইন মুহমদ এরশাদের নামে প্রবর্তিত এই পদক তার প্রত্যেক জন্মবার্ষিকীতে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পদক, সম্মাননা ও এক লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। স্বাস্থ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাহিত্যে স্বনামধন্য কবি ফজল সাহাবুদ্দিনের (মরণোত্তর) পক্ষে পদক নেন তার মেয়ে দিনা সাহাবুদ্দিন, কৃষিতে বিশিষ্ট কৃষি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, সংগীতে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), তার পক্ষে পদক ও সম্মাননা গ্রহন করেন তার স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রো ইতি, শিক্ষায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্ল্যাহ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বরেণ্য নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিক (মরণোত্তর), তার পক্ষে পদক গ্রহণ করেন মেয়ে আরিফা কবির, ক্রীড়ায় বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ গোলাম সরোয়ার টিপু, শিল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল ওয়াহেদ বাবুল।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কৈশোর থেকে যৌবন ও শেষ জীবন অবধি তিনি ছিলেন, একাধারে ছাত্র, ডানপিটে কিশোর, তুখোড় খেলোয়ার, সাহিত্যিক-কবি, দক্ষ প্রশাসক, জননন্দিত রাজনীতিবিদ। কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন। সে সময় একাধারে ৪ বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ছিলেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে হয়েছিলেন ভার্সিটি স্পোর্টস ব্লু। এরপর সৈনিক হিসেবে পেশা গ্রহন করে তৎকালীন পাকিস্তান সেনা ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। এছাড়াও খেলতেন সেনাবাহিনী হকি দলে। রাজনীতিতে আসার পর যখন যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই তার নৈপুন্যের ছাপ রেখেছেন। তার ক্ষমতা গ্রহন যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন এটা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নয় বছরের শাসনামল ছিল এ দেশে সু-শাসন, উন্নয়ন, সমৃদ্ধির এক নবযুগ। দেশের এমন কোন সেক্টর নেই, যেখানে তার উন্নয়ন বা সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কার ও সার্বিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সংস্কারের সুবিধা সম্প্রসারিত করেছিলেন। সাধারন পর্যায়ের মানুষ, চাষী, জেলে, মুটে-মজুর, শ্রমিকদের জীবনে কিভাবে সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা উন্নতি আসতে পারে সে দিকে ছিল তাঁর তীক্ষ্ম দৃষ্টি। তিনি আপামর মানুষের বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের কল্যান সাধন ও স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পল্লীর মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছিলেন। সে কারনেই সাধারন জনগন তাকে পল্লীবন্ধু খেতাবে ভূষিত করেছেন।
এ ছাড়াও কর্ম জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্য র্চচা ও খেলাধুলা অব্যাহত রেখেছিলেন। এ পর্যন্ত তার লেখা ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে খেলাধুলা করতেন এবং খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পদক্ষপে গ্রহন করেছেন। বাংলাদেশে গলফ-এর মতো অপ্রচলিত খেলার যে ব্যাপক প্রচলন আজ চোখে পড়ে, সেটা সম্ভব হয়েছিল তার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।
জি এম কাদের বলেন, তিনিই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করছে, অনেক খেলায় যেমন ক্রিকেটে পৃথিবী ব্যাপী প্রতিযোগিতায় সমান তালে লড়াই করতে সক্ষম হচ্ছে। তার কর্মকাণ্ড এতই বিস্তৃত যে, সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পদক প্রদান করতে পারলাম না। এবার আটটি বিষয়ে ‘পল্লীবন্ধু পদক’ ঘোষণা করেছি। আগামীতে এই পুরস্কারের পরিধি আরো প্রসারিত করার প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের।