হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত শুনানি শেষে এই জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন স্বাস্থ্যের ডিজি আজাদ আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে দুদক জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণের জন্য আগামী ৪ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য আসামিরা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. দিদারুল ইসলাম।
২০২০ সালের ২৩ বছরের সেপ্টেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী এই মামলাটি দায়ের করেন। হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করা হয়। সেখানে আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়নি। তবে তদন্তে নাম আসায় অভিযোগপত্রে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। এসময় দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্স নবায়ন না করা রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন। ওই হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগী প্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য কর্মকর্তাদের মাসিক খাবার খরচ হিসেবে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার চাহিদা তুলে ধরাসহ এর খসড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে করা মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।