আড়াই টাকা অনিয়মের অভিযোগে ১৯৮২ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাট সম্প্রসারণ সহকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের সাজা বাতিলসংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ ৬ বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেয়। এর ফলে, ওবায়দুল আলম আকন সরকারি চাকরিসংক্রান্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ফিরে পেলেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে ১৯৭৪ সালে চাকরিতে যোগ দেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও পান।
এরই মাঝে ৫ প্যাকেট পাটের বিজ বিক্রিতে আড়াই টাকা অর্থাৎ প্রতি প্যাকেটে ৫০ পয়সা করে বেশি নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন এক ব্যক্তি।
১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সামরিক শাসনামলে সেই অনিয়মের ঘটনায় করা মামলায় ওবায়দুল আলমকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই আদেশের পর তাকে কারাগারে, চাকরিও হারান ওবায়দুল আলম।
এর প্রায় ৩৯ বছর পর ২০১১ সালে জেনারেল এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই চাকরি ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন ওবায়দুল আলম।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে সাজার বিষয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। এরপর ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে ১৯৮২ সালে সামরিক শাসনামলের সেই অনিয়মের ঘটনায় ওবায়দুল আলমকে দেয়া ২ মাসের দণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার আদেশও অবৈধ ঘোষণা করে আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে আপিল করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বছরের ৮ মার্চ আপিল বিভাগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আপিল খারিজ করে। এর ফলে ওবায়দুল আলমকে পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে উপযুক্ত বা প্রকৃত পদে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশও বহাল থাকে।
তবে ১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের সামরিক শাসনামলে সেই দুই মাসের দণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অবৈধ করে দেয়া রায় আংশিক সংশোধন করা হয়। সেই রায়ে বলা হয়, ওবায়দুল আলমের সাজা বাতিল হলেও তিনি এ পর্যন্ত দাবি করা বেতন-সুবিধা পাবেন না।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই রিভিউও সোমবার খারিজ করে দিল আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আদালত বলেছে ওবায়দুল আলমকে তার প্রাপ্য বেতন-সুবিধাও দিতে হবে।
আদালতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন প্রবীর নিয়োগী।
রায়ের পর উচ্ছ্বসিত ৬৮ বছর বয়সী ওবায়দুল আলম আকন বলেন, ‘আজকে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বেশি আনন্দিত হলে মানুষ ভাষা হারিয়ে ফেলে। আমিও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি জীবিত থাকা অবস্থায় এ রায় দেখে যাব এমনটি ভাবতে পারিনি। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।’