সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়ার ৪৩ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং চেক প্রজাতন্ত্র। তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্তর্ভুক্ত এই চার দেশ। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে এসব দেশ একযোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোফি উইলমস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এসব রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তার দেশে নিযুক্ত রুশ কূটনীতিকদের বেলজিয়াম ত্যাগ করতে হবে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি জানায়, বেলজিয়াম ২১ রুশ নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। তারা ব্রাসেলসে মস্কো দূতাবাস এবং অ্যান্টওয়ার্পের কনস্যুলেটে কর্মরত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাশিয়ার ওই ২১ নাগরিকের সবাই কূটনীতিক হিসেবে স্বীকৃত থাকলেও তারা মূলত গুপ্তচরবৃত্তি এবং প্রভাব বিস্তারের কাজে নিযুক্ত ছিল।
ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, তারা কূটনৈতিক স্বীকৃতি থাকা ১৭ জন ‘কথিত রাশিয়ান গোয়েন্দা এজেন্টকে’ অপসারণ করছে, যারা গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতো। মস্কোর যে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকার কথাও জানিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এদিকে রাশিয়ান দূতাবাসে কর্মরত চার সিনিয়র কর্মকর্তার ক্রিয়াকলাপ ‘কূটনৈতিক আচরণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেনি’ বলে অভিযোগ করে তাদের বহিষ্কার করেছে আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তর। তা সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত রাখা উচিত বলে মনে করে ডাবলিন।
সবশেষ মঙ্গলবার একই পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে চেক প্রজাতন্ত্রও। এদিন প্রাগে রাশিয়ান দূতাবাসের কূটনৈতিক স্টাফের একজন সদস্যকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক টুইট বার্তায় দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়, প্রাগের ওই রুশ কর্মকর্তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অফিস ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং ‘ইইউতে রাশিয়ান গোয়েন্দাদের উপস্থিতি’ কমানোর জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে একই ধরনের অভিযোগে গত বুধবার ৪৫ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে পোল্যান্ড। চলতি মাসের শুরুতে সমন্বিত এক পদক্ষেপে ১০ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল লাটভিয়া, এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো একজোট হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একই সঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো। তবে ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ ঘোষণা করে মস্কো দাবি করেছে, এই সামরিক অভিযানের অর্থ যুদ্ধ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রতিহত করাই তাদের লক্ষ্য।