পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে দেশ হিসেবেই আমরা স্বীকার করি না। যতোদিন আমরা তাদের স্বীকৃতি না দিচ্ছি, ততোদিন কোনো বাংলাদেশি ইসরায়েলে গেলে তাকে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ফিলিস্তিনকে ওষুধসামগ্রী উপহার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম পাসপোর্ট সংশোধন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবে ইসরায়েল নিয়ে আমাদের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট। ফিলিস্তিন নীতিতে আমাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা তাদের পাশে থেকেছি।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রকৃত বন্ধু বাংলাদেশ। আমরা শুরু থেকেই এই দেশের সরকার ও জনগণের সহায়তা পেয়ে আসছি।
তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর বাংলাদেশে আছি। তবে গত ১৪ দিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। গাজা হামলার পর এ দেশের মানুষ আমাদের বিপুলভাবে সহায়তা করেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের দু’টি ব্যাংক হিসাব করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিংয়েও টাকা পেয়েছি। আমরা এই সহায়তা গাজায় পাঠাবো। তবে ঠিক কত টাকা পেয়েছি, এখনও হিসাব হয়নি। সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি এবাদুল করিম। এসময় ফিলিস্তিনকে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধসামগ্রী উপহার দেয়া হয়। সম্প্রতি দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এসব সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশি পাসপোর্টে আগে লেখা থাকতো ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’। অর্থাৎ এই পাসপোর্ট ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ। সম্প্রতি ইস্যুকৃত কিছু ই-পাসপোর্টে দেখা গেছে, সেখানে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ লেখা। অর্থাৎ ‘এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ’। ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ বা ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দ দুটি অনুপস্থিত।
বাংলাদেশি পাসপোর্টের এই পরিবর্তনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিচালক গিলাদ কোহেন টুইট করেন, সেখানে তিনি ইসরায়েল ভ্রমণে বাংলাদেশিদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে সাধুবাদ জানান।
বিষয়টি স্পষ্ট করে গত ২৩ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টে ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দেয়া টুইট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। মূলত বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ অংশটুকুর অনুপস্থিতির কারণে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টের ‘আন্তর্জাতিক মান’ বজায় রাখার জন্য ওই অংশে পরিবর্তনটি আনা হয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েলে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিতই থাকছে।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা ও আল-আকসা মসজিদে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার নিন্দা জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে জাতিসংঘ স্বীকৃত রেজুলেশনের আলোকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এবং পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখার নীতিগত অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ।