প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সরকার ও রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নাম না দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এজন্য ইসি নিয়োগে প্রস্তাবিত নামগুলো আগেই প্রকাশের দাবি তুলেছেন তারা। একই সঙ্গে ইসি নিয়োগে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী ব্যক্তিদের নাম যাতে প্রস্তাব না করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরিপন্থী কেউ যাতে ইসিতে আসতে না পারেন, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুশীল সমাজের নাগরিকরা। আজ প্রথমার্ধে প্রথম দফার এই বৈঠকে ২০ জনের মধ্যে ১৪ বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দলীয় সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যেন ইসিতে স্থান না পান, এমন দাবি তারা জানিয়েছেন। এই দাবি উপস্থিত আরও অনেকেই সমর্থন করেছেন।সুবিধাভোগী বলতে কী বুঝিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন, এমন ব্যক্তি হতে পারেন।
একই দাবি তুলে ধরার কথা জানান বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘যারা অবসরের পরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ বা বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন, তারা যেন কোনোভাবেই ইসিতে না আসতে পারেন। আর যারা আসবেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা ও সাহসিকতা যেন থাকে। ইসি গঠনের জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে, তাদের নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়, সে জন্য প্রস্তাব করেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী, এমন কাউকে যেন ইসি হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া হয়, সেই প্রস্তাব করেছি। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী কেউ যাতে ইসি হিসেবে নিয়োগ না পান, তা–ও নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে যোগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি মাহফুজা খানম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ব্যক্তিদের ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বলে জানান।
বৈঠকে যারা অংশ নেন তারা হলেন- আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এম কে রহমান, শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ এবং ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে আজ দুই দফায় এবং আগামীকাল রোববার বিশিষ্টজন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে অনুসন্ধান কমিটি। ইতিমধ্যে ৬০ জনের বেশি বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আজ প্রথমার্ধে প্রথম দফার এই বৈঠক বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে। এরপর দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়।