সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে মালিক কর্তৃক সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস প্রদানসহ ১২ দফা দাবি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দোতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেনন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী। অন্যদের মধ্যে প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান রাজা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের আগে শ্রমিকদের এক মাসের বেতন ও বোনাস প্রদানের জোর দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম আইন লঙ্ঘণ করে চাঁদাবাজির নির্দেশিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন ও মালিক সমিতির নেতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যাবত পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও সড়ক পরিবহন মালিক সমতি কর্তৃক আদায়কৃত অর্থ থেকে শ্রমিকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক পরিবহন শ্রমিকদের রেশন প্রদান, কোভিড- ১৯ এ ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানোন্ন্নয়নে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ এবং সড়ক পরিবহন খাতে বাজেট বরাদ্দের আগে শ্রম দপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত পরিবহন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক করা এবং শ্রম আইন অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবহন মালিক কর্তৃক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতারা বলেন, লকডাউন আমাদের শ্রমজীবী মানুষের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও দুর্বিসহ জীবনের বেড়াজাল। লকডাউনে শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা, অফিস/সার্ভিস সেক্টর খোলা, শপিং মল/বাজারঘাট খোলা। বিপত্তি শুধু পরিবহনের বেলায়। তাঁরা বলেন, অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্য নিয়োগপত্র না থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পান না; গাড়ির চাকা না ঘুরলে তাঁদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় না। পরিবহন মালিকরা অসহায় শ্রমিকদের দায়িত্ব নিচ্ছেন না এবং সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো অনুদান বা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না।
পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, চরম দূরাবস্থায় শ্রমিক ফেডারেশন ও মালিক সমিতি শ্রমিকদের পাশে নেই। অথচ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কর্তৃক শ্রম আইনবিরোধী চাঁদার নির্দেশিকা তৈরি করে দীর্ঘদিন সড়কে চাঁদাবাজি করছে। এতে প্রমাণিত হয়, তাঁরা চাঁদাবাজ। অবিলম্বে এসব চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিবহন মালিকের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করায় প্রমাণিত হয়েছে যে ওই সংগঠনের নেতারা পরিবহন মালিকদের দালাল। তাঁরা আন্দোলনের নামে পরিবহন শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে করোনার বিস্তার ঘটাচ্ছে। শ্রমিক ফেডারেশন ঈদের দিন টার্মিনালে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি দিয়ে একদিকে সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় মেতেছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কর্তৃক ঈদের দিন অবস্থানের নামে হঠকারী কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বানো হয়।