রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর রাজশাহী। এ মহাগরীতে জন্মগ্রহণ করে আমরা নিজেকে গর্বিত মনে করি। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) এ মহানগরীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন। এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ মহানগরীটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল ঘোড়ামারা, কুমারপাড়া, কালেক্টরেট ভবনসহ কয়েকটি এলাকাকে কেন্দ্র করে। আগে থেকেই হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে আমরা সব ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে রাজশাহীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) উদ্যোগে ‘ঐতিহ্যে রাজশাহী শহর’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে নগরভবনের সিটি হল সভাকক্ষে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজশাহীর নগরপিতা এসব কথা বলেন।
মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘী পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সোনাদিঘীর চারাপাশে গড়ে ওঠা স্থাপনা ভেঙে সোনাদিঘিকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজ শেষে সোনাদিঘীকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। মহানগরীর ২২টি জলাশয় কিনে পাড় বাঁধাইসহ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব ঐতিহ্য ধরে রেখেই রাজশাহীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সবার সহযোগিতা ও পরামর্শে রাজশাহীকে দেশের অন্যতম আধুনিক ও বাসযোগ্য মহানগর গড়তে চাই।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে নৌবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান হতে রাজশাহী পর্যন্ত পদ্মানদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌরুট চালু করা সম্ভব হলে রাজশাহীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। রাজশাহীর অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিসিক শিল্পনগরী-২, চামড়া শিল্প পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল কবির। অনুষ্ঠানে রাসিক মেয়র ও অতিথিদেরকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। এসইউবির পরিচিতি উপস্থাপন করেন এসইউবির ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান। স্বাগত বক্তব্য ও মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিভাগীয় প্রধান, স্থাপত্য বিভাগ, এসইউবির ডা. সাজিদ বিন দোজা।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, রাজশাহী প্রাচীণ নগরী। এই নগরীতে বড়কুঠি, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরসহ অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। যুগের প্রয়োজনে নগরায়ন ও বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করে পরিকল্পিতভাবে মহাগরীকে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই মহাগরীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।
সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সভাপতি, অধ্যাপক ড. মো আবুল কাশেম। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেন, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ আর এম আবদুল মজিদ, রুয়েট স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান।