কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূকে দলবেধে শ্লীলতাহানির ঘটনা বর্তমান দুঃশাসনেরই একটি চালচিত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু মর্মান্তিকই নয়, দেশবাসীকে বেদনাহত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। দেশবাসী যেন অন্ধকার প্রতিক্রিয়া, দাসত্ব ও মৃত্যুপুরীর আবহের মধ্যে বসবাস করছে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।
এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘স্থানীয় এমপি সাইমুন সারোয়ার কমল এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ওই সব দুষ্কৃতকারী, যারা ওই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের ছবি পাওয়া গেছে। দুষ্কৃতকারীদের একজনের নাম জয়। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামও স্বীকার করেছেন, জয় ছাত্রলীগের কর্মী। সে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সরকারি দলের এই নিকৃষ্ট নমুনা নিয়ে আর কি বলা যেতে পারে? নির্যাতিত নারীর আর্তনাদ, হাহাকার ক্ষমতাসীনদের বোধোদয় ঘটাতে পারবে কি?’
রিজভী আরও বলেন, “বিরোধী দলের প্রতি পেশী প্রদর্শন, উগ্রচণ্ডা হয়ে ওঠা, মামলা-হামলা, গুপ্তহত্যার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপরে প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে-নির্বিচারে নেমে আসে পাশবিকতা। ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন শকুন ও হায়েনাদের জয়জয়কার। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘জেনারেল লাইসেন্স’ দেওয়ার কারণে দেশজুড়ে পৈশাচিক, লোমহর্ষক ঘটনার এক ভয়াবহ দুর্দিন বিস্তার লাভ করেছে।’ কক্সবাজারে গৃহবধূর ওপর নির্মম পাশবিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে রিজভী বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছেন বহু যাত্রী। নিহতের সংখ্যা ৩৬ এর বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনে দগ্ধ অসংখ্য আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। আমরা শোক জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সারা জাতি এই বেদনার্ত ঘটনায় বিমূঢ় ও শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বিনা ভোটে জবাবদিহিহীন সরকারের কারণেই সারা দেশে সর্বত্র অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রাজত্ব করছে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই সড়ক ও নৌপথসহ সব জনপথেই নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ৪০০ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করা লঞ্চটি অগ্নিকাণ্ডের সময় হাজার খানেক যাত্রী অবস্থান করছিল, এটি কীভাবে সম্ভব? নৌ-পরিবহণে দুর্বৃত্তদের দাপট বলেই কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলাকেই তোয়াক্কা করা হয় না। আর সে কারণেই জীবন দিতে হচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।