কক্সবাজারের রামু রশিদনগর ইউনিয়নের পানির ছড়া ও কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে বনবিভাগকে মাসোহারা দিয়ে চলছে ৭টি অবৈধ স’মিল। এতে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে শত শত একর সামাজিক বনায়নের গাছ। এর মধ্যে পানিরছড়া মামুন মিয়ার বাজারের পাশে ও ধলিরছড়ায় ৪টি এবং ভারুয়াখালী এনামুল হক সওদাগর বাজারে ও আনুমিয়ার বাজারে রয়েছে ৩টি অবৈধ স’মিল। তবে সম্প্রতি বনবিভাগ ও রামু উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ধলিরছড়ার তিনটি অবৈধ স’মিল উচ্ছেদ ও জরিমানা করলেও স’মিল মালিককরা ফের চালু করেছে।
কয়েকজন গ্রামবাসীর ভাষ্য মতে, বছরের পর বছর ধরে বনবিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থাপিত স’মিলে চোরাই গাছ চিরাই ও পাচারের ডিপুতে পরিণত হয়েছে। এসব চিরাইকরা কাঠ ডাম্পার ও জীপ যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বাসাবাড়িতে এবং বিভিন্ন অবৈধ ফিশিং বোট তৈরীতে সরবরাহ করা হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুন মিয়া জানান, টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে অবৈধ সমিল উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে।
গত১৯ মে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমার নেতৃত্বে বনবিভাগ ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধলিরছড়া মোড়াপাড়া এলাকা থেকে সামশুল আলম ও মো. আলমের দুটি স’মিলের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ এবং প্রায় ১০২ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়। উচ্ছেদের পরে সেগুলো ফের চালুর বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের পানিরছড়া মামুন মিয়ার বাজারের পার্শ্বে মৌলভী শফিকুর রহমানের মালিকানাধীন ১টি, রামু ধলিরছড়া মোড়াপাড়া এলাকায় সামশুল আলমের ১টি ও মো. আলমের ১টি ও কবির আহম্মদের ১টি স’মিল বসানো হয়েছে। এছাড়াও ঈদগাঁও থানাধীন ভারুয়াখালী আনু মিয়ার বাজারে গিয়াস উদ্দিনের মালিকানাধীন ১ টি স’মিল, ভারুয়াখালী এনামুল হক সওদাগর বাজারে ছাবের আহম্মদের মালিকানাধীন ১টি স’মিল ও ভারুয়াখালী ফকিরের কবরস্থান বাজারে মনিরুল হকের মালিকানাধীন ১টি স’মিল হরদম চালু রয়েছে।
একটি সুত্র জানিয়েছেন, এসব স’মিলের মালিকগুলোর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন ও শফিকুর রহমান হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেছিল। এই রীটের মেয়াদ শেষও হয়েছে ৬/ বছর আগে। রীটের মেয়াদও বাড়ায়নি। রীটের দোহায় দিয়ে অবৈধ স’মিল চালিয়ে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ স’মিল। এসব স’মিলের নেই বৈধ লাইসেন্স। ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
স’মিলে কাঠ জোগান দিতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে বন বিভাগের বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছ। সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন বিভাগ, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি এবং যথাযথ পদক্ষেপের অভাব এ সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সব স’মিলের বৈধ কোন কাগজপত্র কিংবা কোন প্রকার লাইসেন্স নেই। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এসব স’মিল বসানো হয়েছে এবং প্রকাশ্যে চিরাই করা হচ্ছে বনাঞ্চলের চোরাই কাঠ। তবে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জাধীন পানির ছড়া বনবিট ও ধলিরছড়া বিট কর্মকর্তা এবং বনকর্মীরা এসব অবৈধ স’মিল থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করে থাকেন।
অবৈধ স’মিল উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আগেই বনকর্মীরা খবর পৌঁছে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, সামাজিক বনায়ন রক্ষায় স্থানীয় নাগরিক সমাজ অবৈধ সমিল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বারবার মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তার নিকট শরণাপন্ন হলেও তিনি কোন উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুন মিয়া বন বিভাগের কর্মচারীদের সাথে স’মিল মালিকদের মাসিক চুক্তি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে ধলিরছড়া মোরাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে দুটি স’মিল উচ্ছেদ করা হয়েছে।
দুটি স’মিলের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ এবং প্রায় ১০২ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। তিনি বন বিভাগে লোকবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বলেন অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যস্ততার কারণে অভিযান করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম জানান, স’মিল উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। অবৈধ স’মিলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলমান।