শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার আতা এলাহীর হাতে জিম্মি

কক্সবাজার থেকে ফিরে বিশেষ প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৯৭৮ পাঠক পড়েছে

ঘুষের টাকা ডিএফও এবং সিএফকে সিংহভাগ দেয়ার স্বীকারোক্তি

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার আতা এলাহীর হাতে জিম্মি

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ কার্যত শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা (ডিপ্লোমা ফরেস্টার) একেএম আতা এলাহীর হাতেই জিম্মি রয়েছে। উত্তর বন বিভাগের শহর রেঞ্জ কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে একেএম আতা এলাহীর উপর। অপরদিকে অফিসের দাপ্তরিক কাজ এবং হিসাব খাতও রয়েছে তার নিয়ন্ত্রনে। তার নেতৃত্বে ডিপ্লোমা ফরেস্টারেরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর জিম্মি করে রেখেছে উত্তর বন বিভাগ।

জানা গেছে, গত বছর শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমদাদুল হক অন্যত্র বদলী হওয়ার পর মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে বাঘখালী রেঞ্জ থেকে শহর রেঞ্জে পোস্টিং নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে বাঘখালী রেঞ্জের অনিয়ম দূর্ণীতির কোন অভিযোগ আসলে তাও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এমনকি তার ক্ষমতার দম্ভে বন অধিদপ্তরের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদেরও তিনি পাত্তা দেন না। শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহীর দখলে রয়েছে বনজদ্রব্য, আসবাবপত্র চলাচল পাশ (টিপি), করাতকল (স’মিল) ফার্নিচার মার্ট ও দোকানের লাইসেন্স প্রদান।এখাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।

অবৈধ করাতকল, ফার্নিচার দোকান থেকে তালিকা করে মাসিক কয়েক লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলণের অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১৯ সালে একই পদে দায়িত্ব পালনকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাসান মেহেদী অর্ধ কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগে বরখাস্ত হন। তার দেখানো পথেই হাটছেন আতা এলাহী, অভিযোগ অনেক বনকর্মীর। সুত্র মতে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার আস্থাভাজন হওয়ার সুযোগে পাহাড় কাটা, বনের জমির দখল বিক্রি, গাছ বিক্রি, গাছ ও ফার্নিচার পাচারে সহযোগীতা, পাহাড়ের মাটি ও গাছ পাচারের গাড়ি জব্দ করে টাকা আদায়,মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় করে নামেমাত্র জরিমানা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ,ভুয়া চালান তৈরী, রাজস্ব ও বিভিন্ন প্রকল্পের হিসাবে বিভিন্ন জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে এই আতা এলাহী সিন্ডিকেট।

এছাড়াও ডিএফও’র আস্থাভাজন হবার কারনে লোভনীয় রেঞ্জ বিটে পোস্টিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে আরো প্রকাশ, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন কক্সবাজার শহর রেঞ্জ।অতিলোভনীয় ও অবৈধ আয়ের উৎস ভুমি খ্যাত এই শহর রেঞ্জেই টিপি,জোত পারমিট, পিওআর,সিওআর মামলা নিষ্পত্তিসহ রাজস্ব আয় সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজগুলো সম্পাদন হয়ে আসছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার আস্থাভাজন ও অবৈধ আয় বর্ধনে বিশেষ ভুমিকা রাখায় ওই শহর রেঞ্জ কর্মকর্তার কদরও আলাদাভাবে বেশী।

ডিএফওর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করা ওই রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অন্যান্য বনকর্মীরা একটু খাতির যত্নও বেশি করতে হচ্ছে। তাকে খুশি করা না গেলে কৌশলে ফাঁদে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী বাঁকখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে সরকারী কোটি কোটি টাকার গাছ পাচারে সহযোগীতা করেছে। তাৎকালিক শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বদলী হওয়ায় সেই পদে স্থলাভিষিক্ত হন বাঁকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী। অবশ্য বনকর্মীদের দাবী পোস্টিং বাণিজ্যের কারণে ভাল স্টেশনগুলো ঘুরে ফিরে বন সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারাই ভাগিয়ে নেন। আতা এলাহীর বেলায়ও তা বিপরীত ঘটেনি।

অভিযোগে আরো প্রকাশ, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ সংগ্রহ ও পাচার করার ক্ষেত্রে জোত পারমিটকে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করা হয়। এ কাজে বিশেষ ভুমিকা রাখছে শহর রেঞ্জ কর্মকর্তার একেএম আতা এলাহী।বিশেষ করে চোরাই কাঠ পাচারের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে একটা বৈধতার রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ভুয়া জোত পারমিটের কাগজ তৈরি করে। জোত পারমিটের আড়ালে সংরক্ষিত বনের কাঠ চুরি করা হয়।তেমনি ভাবে চোরাই কাঠ জেলার বাইরে চট্টগ্রাম, ঢাকা পাচারের জন্য ট্রানজিট পাশ (টিপি) ব্যবহার করা হয়। তবে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই কাঠ পাচারের ঘটনাও ব্যতিক্রম নয়। এদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী এলাকার অবৈধ কাঠকে জোত পারমিটের আড়ালে বৈধ রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে স্থানীয় জোতের মালিকের কাছ থেকে জমির দলিল ও ছবি নিয়ে জোত পারমিটের জন্য আবেদন করা হয়। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট জোতের দলিল সংশ্লিষ্ট এলাকার কারবারী ও হেডম্যান কর্তৃক সত্যায়িত করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ডিসি অফিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট জোতে যেয়ে দলিল ও অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে জোত পারমিট ইস্যু করার কথা থাকলেও সাধারণত তা করা হয় না। ডিসি অফিসে এবং বন বিভাগের সংশি−ষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে কোনো তদন্ত ছাড়াই জোত পারমিট ইস্যু করিয়ে নেওয়া হয়।এছাড়া বনবিভাগ থেকে নিলামে নেওয়া কাঠের টিপি ইস্যু, চেকিং করার নামেও টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে আতা এলাহীর বিরুদ্ধে।ভুয়া এসব জোত পারমিট ও বৈধ টিপির নামে দেদারছে পাচার হচ্ছে কক্সবাজার বনাঞ্চলের মুল্যবান কাঠ।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ঈদগড়-বাইশারী-গর্জনিয়া সড়কে গাছ পাচারের সক্রিয় সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ ও বনভূমি। এসব পাচারকারী চক্রের সাথে আতা এলাহীর রয়েছে যোগসাজশ।রাতের আধাঁরে কাঠ পাচারে সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে বনবিভাগের বিশেষ টহল দলের ওসির দায়িত্ব নেওয়া আতা এলাহী। তবে লেনদেনের হেরফের হলেই কাঠ ভর্তি ট্রাক,মিনি ট্রাক আটকের ঘটনা ঘটে। এরপর মামলার হুমকি দিয়ে আয় করা হয় মোটা অংকের অর্থ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী এই অভিযোগ করেন। এব্যাপারে কক্সবাজার শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী বলেন, আমি কি করি না করি সবই আমার ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার ও বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস জানেন। দু’পয়সা আয় হলে তার সিংহভাগই তাদের দিতে হয়। উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার’র মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ফরেস্টার আতা এলাহীর এ ধরনের কথা বলা ঠিক হয়নি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। উল্লেখ্য দুর্ণীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই ফরেস্টার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজে পারদর্শী বিধায় কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে সরকারী বদলী নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৬ বছরের অধিক সময় কর্মরত থেকে বনজ সম্পদকে উজাড়ে অগ্রনী ভূমিকা রাখলেও থেকে গেছেন সকল ধরাছোয়ার বাইরে।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580