করোনাকালে প্রতি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিগত বছরে সারা দেশে শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৯ হাজারটি। পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৬০২টি। এই সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে ১০ গুণ। ২০ হাজার নারী ও শিশু পাচারের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ২৫৩টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের বর্তমান প্রেক্ষাপট ২০২০: বিশ্লেষণ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি সালমা আলী বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা প্রতি মাসে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। বাংলাদেশে এই হার আরো বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এই সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা। এখন মেয়েশিশুদের পাশাপাশি ছেলেশিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, দেশে অনেক ভালো আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে অপরাধ বাড়ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দুষ্কৃতকারীরা নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ করেও বিচারের আওতায় আসছে না। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ হ্রাস পেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, গত ১০ দিনে পত্রিকার পাতা দেখলে বোঝা যায়, কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। চলন্ত বাসেও নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী সালমা আলী বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ২০০০ সালে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের বিধিমালা করা হয়নি। বিধিমালা না থাকায় ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলায় একেক বিচারক একেকভাবে বিচার করেন। এ ছাড়া একজন নারী যখন ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলে, তখন তার মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত এবং বিচার- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে অবিশ্বাস করা হয়। ফলে অনেকেই মামলা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।