অবিভক্ত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও মহাসচিব এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ করোনায় মারা গেছেন। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আজ শনিবার ( ২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুু-বান্ধব, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আগামীকাল রবিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ প্রবীণ সাংবাদিকের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল আলম।
এর আগে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।আজ দুপুর দেড়টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে মারা যান প্রবীণ এই সাংবাদিক।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান এক বিবৃতিতে ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা পেশার অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনি ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক। নেতৃবৃন্দ শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯৪৫ সালে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার নারান্দী গ্রামে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক এবং ১৯৭২ সালে এলএলবি করেন তিনি। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি।
একুশে পদক ছাড়াও শেরেবাংলা পদক, মওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক, নরসিংদী প্রেস ক্লাব স্বর্ণপদক, মাদকবিরােধী ফেডারেশন স্বর্ণপদক লাভ করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯২ সালে সার্কভূক্ত দেশগুলোর সাংবাদিক ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এরপর দ্য ডেইলি স্টারের ডেপুটি এডিটর এবং ১৯৯১ সালে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এবং দি নিউজ টুডে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া চারবার তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
কিছুদিন অধ্যাপনা শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান অবজারভারের চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন। স্বাধীনতার পর আবারও অবজারভারে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১৯৯০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। এ ছাড়া সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া এসোসিয়েশন (সাফমা) সভাপতি, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন।
রিয়াজউদ্দিন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, আরব্য রজনী ও পারস্য রজনী।