ভারতে করোনাভাইরাসের ‘ডেল্টা’ ধরন নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেই নতুন আরেকটি ধরন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এরই মধ্যে তিনটি রাজ্যে প্রায় দুই ডজন রোগীর শরীরে নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডেল্টা প্লাস’। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, শুধু মহারাষ্ট্রেই ভাইরাসটির এই নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে ১৬ জনের।
‘ডেল্টা প্লাস’ ধরনটির সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ঘোষণার পর গত সোমবার ভারতে রেকর্ড ৮৬ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হলেও এই গতি ধরে রাখা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য ও নীতি বিশেষজ্ঞ চন্দ্রকান্ত লাহেড়িয়ার মতে, দীর্ঘমেয়াদে এভাবে চালানো যাবে না।
তিনি বলেন, একদিনেই অনেক রাজ্যই তাদের মজুদ টিকা শেষ করে ফেলেছে, যা সামনের দিনগুলোতে টিকাদান কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করবে। আগামী কয়েক মাসের জন্য টিকা সরবরাহের লক্ষ্য বর্তমানে ঠিক করা হয়েছে, তাতে করে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়া সম্ভব।
সরকারের এই উদ্যোগের ফলে টিকা পাওয়ার যোগ্য ৯৫ কোটি মানুষের মাত্র ৫.৫ শতাংশকে এর আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
বিশেষ করে ভারতের দৃই তৃতীয়াংশ মা্নুষের বসবাস যেখানে, সেই গ্রামাঞ্চলে তরুণদের যখন টিকার আওতায় আনা হবে তখনই এই কার্যক্রমের গতি ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করেন দিল্লির মহামারী বিশেষজ্ঞ রাজীব দাশগুপ্ত।
বিপদে আছে রাজধানীও। সেখানকার কর্তৃপক্ষের তথ্য, দিল্লির ৮০ লাখের বেশি বাসিন্দা এখনও টিকার প্রথম ডোজই পায়নি। টিকাদান বর্তমান গতিতে চললে দিল্লির সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার আওতায় আনতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে।
বর্তমানে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এছাড়া ভারত বায়োটেক বানাচ্ছে ‘কোভ্যাক্সিন’।
গত সপ্তাহে সেরাম ঘোষণা দিয়েছে, জুলাই থেকে তারা দৈনিক কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। আর ভারত বায়োটকেরে লক্ষ্য মাসে দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদনের।
এর বাইরে শিগগিরই রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক ভি’ টিকার প্রয়োগ শুরু করার আশা করছে ভারত। এছাড়া এ বছরের মধ্যে ফাইজারসহ আরও কিছু কোম্পানির টিকা আমদানির আশাও করা হচ্ছে।
গত তিন মাসের মধ্যে ভারতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকলেও নতুন ধরনগুলোর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় টিকার আওতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪২ হাজার ৬৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, যা গত ২৩ মার্চের পর সর্বনিম্ন। এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ৯৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬১ জনে দাঁড়ায়।
আর মঙ্গলবার আরও ১১৬৭ জনের মৃত্যুতে ভারতে মোট মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৮৯ হাজার ৩০২ জন।