বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরো, যতবার ভেঙেছে আরও জ্বলজ্বল করেছে, নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। কিন্তু যতবার আঘাত এসেছে, ততবার আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ সংগঠনকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ পারেনি এবং আগামীতেও পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ও চিন্তা, সেটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। সেটাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নাম মুছতে চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।’
‘আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়া প্রত্যেকে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছেন? লক্ষ্য একটাই আওয়ামী লীগকে শেষ করা। কেন? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গরিব দুঃখী মানুষের পেটের ভাত হয়, মাথাগোঁজার ঠাঁই পায়, চিকিৎসা পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়। এটা বোধহয় কিছু শ্রেণির পছন্দ না’ বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন মাটি ও মানুষ থেকে উঠে এসেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মুসলিম লীগ সরকারের বিরোধিতা করে এ সংগঠন গড়ে উঠেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই সংগঠনকে এতো সহজে শেষ করে দেয়া যায় না। সাময়িক আঘাত আসে, এটা ঠিক।
শেখ হাসিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরের লোকেরাও দলের ক্ষতি করেছে। বহুবার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে। মওলানা ভাসানী, ড. কামাল, আবদুর রাজ্জাকরা চলে গিয়ে নতুন দল করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরো, যতবার ভেঙেছে আরও জ্বলজ্বল করেছে, নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সব দিক থেকে উন্নতি করেছে। আজকে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি। সুযোগ পেয়েছি বলেই দেশকে সাজানো হয়েছে।’
টিকা নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, তাদের পরিস্থিতি দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সবার আগে টিকা নিয়েছেন, তারাই এখন সমালোচনা করছেন। সমালোচনার আগে বিশ্বের পরিস্থিতি বুঝতে হবে। যেটা চার ডলারে কিনেছি, সেটা ১৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও দাম বাড়বে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা আগেই টাকা দিয়ে সব ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক বিষয়, আমাদের হাতে না। ভবিষ্যতে গবেষণা করে টিকা তৈরির জন্য সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ফার্মাসিউটিক্যাল দরকার, ইনস্টিটিউট তৈরি করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা সমালোচনা করছেন, তারা দেখেন- আমরা কী করতে পারি। তারপর সমালোচনা করেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি আমি। করোনার কারণে কারও সঙ্গে দেখা করতে পারি না। সভা-সমাবেশে যেতে পারি না। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম বলে এখন ভার্চুয়াল সভায় যোগ দিতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা আমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছে। অর্থনৈতিক গতি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ক্ষতি অনেক হয়েছে হয়তো, লক্ষ্য হয়তো পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু সব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভালো আছে, থাকবে। ভারত থেকে টিকা নিয়ে আসছি। পরে ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছিলাম। এখন আবার ক্রয় শুরু করেছি।’
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নে কোনো ম্যাজিক নেই। এটা একটা দর্শন, আদর্শ। আমরা গ্রামকে গুরুত্ব দিয়েছি, যেটা জাতির পিতা চেয়েছেন। গ্রাম থেকে উন্নয়নের পরিকল্পনা শুরু করেছি। সেভাবে কাজ করছি বলে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি।’
দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নেয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। দ্বিতীয় ধাক্কা আরও ব্যাপক ও খারাপভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সতর্ক থাকলে এ অবস্থা থেকেও উত্তরণ ঘটাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সব সময় মানুষের পাশে থাকতে হবে। সংগঠনকে গোছাতে হবে। তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় আছি বলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। এই বাংলাদেশকে নিয়ে কেউ যাতে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘শুধু সরকার দিয়ে সব হয় না। পাশে শক্তিশালী সংগঠন লাগে। আজকে যতোটুকু অর্জন সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ সঙ্গে ছিল বলেই আমরা করতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তৃতা করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান প্রমুখ।