রাঙ্গাামাটি বন সার্কেলের খাগড়াছড়ি বন বিভাগের মাটিরাঙ্গা রেঞ্জে চলছে হরিলুট। চলছে ভুয়া জোত পারমিটের অনুবলে ইস্যুকৃত টিপি মূলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে আহরিত অবৈধ কাঠ বোঝাই ট্রাক থেকে চেকিং এর নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। প্রতিদিনই ১০ থেকে ২০টি ট্রাক বোঝাই চোরাই কাঠ এই চেকপোস্ট দিয়ে পাচার হলেও দেখার কেউ নেই।
দায়িত্বে নিয়োজিত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার জিএম আলমগীর ট্রাক প্রতি মোটা অংকের বিনিময়ে পাচারের সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কাঠ পাচার ও চুরিতে সিদ্ধহস্ত এই ফরেস্টার আলমগীর দীর্ঘ চাকুরীজীবনে বন বিভাগের বিভিন্ন লোভনীয় স্থানে চাকুরি করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেছেন। সাতক্ষীরা শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, নিজ স্ত্রী ও আপনজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে মোটা অংকের টাকা জমা, নিজ বাড়ী এলাকায় ৫৩ বিঘা জমি ক্রয় সহ সাতক্ষীরা-খুলনা রুটে চলাচল করছে তার ৩টি বাস।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে রাঙ্গামাটি সার্কেলের অধীন খাগড়াছড়ি বন বিভাগের অন্তর্গত মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ, এই রেঞ্জটি ভৌগোলিক অবস্থানের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাগড়াছড়ি বন বিভাগে ভূয়া জোত পারমিটের অনুকূলে কাঠ বোঝাই ট্রাকের স্বপক্ষে যেসব চলাচল পাস (টিপি) ইস্যু করা হয় এবং টি পি মূলে যেসব কাঠ বোঝাই ট্রাক খাগড়াছড়ি হতে চট্টগ্রাম ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গমন করে প্রতিটি ট্রাক মাটিরাঙ্গা রেঞ্জের সম্মুখ দিয়ে যেতে হয় কারণ এছাড়া আর কোন বিকল্প সহজ রাস্তা নেই। যার ফলে প্রতিটি কাঠ বোঝাই ট্রাক মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ অফিস অতিক্রম করার সময় মাটিরাঙ্গা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা জিএম আলমগীর হোসেন ফরেস্টারকে প্রতি কাঠ বোঝাই ট্রাক এর জন্য ৮ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এই টাকা না দিলে জিএম আলমগীর হোসেন ট্রাকে বোঝাই কাঠের সাথে টিপিতে বর্ণিত কাঠের মিল নেই বলে কাঠ ও ট্রাক জব্দ করার হুমকি দেন।
ট্রাকে পরিবাহিত কাঠের মালিককে তাই বাধ্য হয়েই জিএম আলমগীর হোসেন ফরেস্টারের দাবিকৃত টাকার চাহিদা পূরণ করতে হয়। আদায় কৃত টাকা প্রতিদিন জিএম আলমগীর হোসেন ফরেস্টার সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ তার অধীনস্থদের মধ্যে বন্টন হয়। জিএম আলমগীর হোসেন চাঁদা আদায়ের মোট অর্থের অর্ধেক পেয়ে থাকেন। মাটিরাঙ্গার রেঞ্জে যেসব জোত পারমিট ইস্যু হয় তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও ভুয়া। ইস্যুকৃত জোত পারমিটে ভূমির অবস্থানে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে গাছের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কারণ জোতের যেখানে দেখানো হয় সেখানে প্রকৃত অর্থে গাছ থাকে না।
ইস্যুকৃত পারমিটের বর্ণিত গাছ সরকারী বন এবং বিভিন্ন লোকের বাড়ি হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যা বনজদ্রব্য পরিবহন নীতিমালার পরিপন্থি। জোত পারমিটের অনুবলে মাটিরাঙ্গা রেঞ্জে যে চলাচল পাস ইস্যু করা হয় ঐ সব চলাচল (টিপি) পাশের সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জোত মাপ ও পরিমাপ মিলানো হলে বেশিরভাগ কাঠের টুকরার সাথে ট্রাকে বোঝাই কাঠের জাত, মাপ ও পরিমাপে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যাবে। এসব অবৈধ কাজ প্রতি অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন চালিয়ে যাচ্ছেন মাটিরাংগা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা।
স্থানীয় সেনাবাহিনী সোর্সের মাধ্যমে খবর পেলেই মাটিরাঙ্গা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের সহায়তাই মজুদ কাঠ এবং ট্রাকে করে পাচার কালে ট্রাক ভর্তি কাঠ সমূহ জব্দ করে থাকেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঠ ভর্তি ট্রাক এবং মজুদ অবৈধ কাঠ মাটিরাঙ্গা সেনা জোন আটক করে বন বিভাগে হস্তান্তর করেছেন। এত অনিয়ম ধরা পড়ার পর মাটিরাঙ্গা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম আলমগীর হোসেন ফরেস্টার বহাল তবিয়তেই মাটিরাঙ্গা রেঞ্জে বহাল রয়েছেন। তার কৃত দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন শাস্তি হচ্ছে না।