সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে কপাল খুলছে অন্যদের। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মহানগর শাখায় আজমত উল্লা খান এবং জাহাঙ্গীর আলম দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, অন্তরীণ সমস্যাকে জনসম্মুখে এনে পাল্টাপাল্টি শোডাউন এবং সড়ক অবরোধের মতো ঘটনায় ক্ষুব্ধ শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খান এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দু’জনকেই সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র।
নবীন-প্রবীণের এই দ্বন্দ্বের ফলে কপাল খুলছে এক নম্বর সহ সভাপতি এবং এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের। নরসিংদী এবং সিরাজগঞ্জ জেলার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৮ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে তৃতীয় জেলা হিসেবে এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়া আজমত উল্লাহ খান এবার গাজীপুর মহানগরের সভাপতি পদ হারাচ্ছেন।
দলীয় শৃঙ্খলা প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দুই নেতা বাদ পড়লে গাজীপুর মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল।
ঘটনার সূত্রপাত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘরোয়া পরিবেশের একটি কথোপকথন এর ভিডিও প্রকাশের পর। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে জাহাঙ্গীর আলমকে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়ে অনেক কৌশল নিয়ে আলাপ করতে শোনা যায়।
গোপনে ধারণ করা ভিডিওটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর মহানগর। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সুপার অডিও ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে বলে দাবি করেন। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেছেন একই সুরে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময় জেলা পর্যায়ের একজন নেতার বক্তব্য কাটছাঁট করে এডিট করে দেয়া হয়েছে কিনা আওয়ামী লীগ তা যাচাই বাছাই করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিও প্রকাশ পরবর্তী ঘটনা বিশ্লেষণ করতে নেমে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সংস্থাগুলোর চোখ চড়কগাছ। বিরোধী শক্তি নয় মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়রের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উসকে দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন সভাপতি আজমত উল্লা খান।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ যে কোন জেলা ও উপজেলা ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকলে তাদের বাদ দিয়ে এক নম্বর সহ সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে দায়িত্ব দিতে। দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপসহীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইতিমধ্যে এমন সাংগঠনিক জেলায় এমন দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। এবার তৃতীয় জেলা হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপসহীন তার দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে গাজীপুর মহানগর। আজমত-জাহাঙ্গীর বাদ পড়ে দায়িত্বে আসছেন বুদ্দীন-মন্ডল।