দ্রুত দূরপাল্লার যানবাহন চালুর দাবি জানিয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছেন, সেভাবে তারা আবার ফিরে আসবেন। তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তাই ফিরে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কয়েকদিনের জন্য হলেও দূরপাল্লার পরিবহন চালু করা জরুরি।
শুক্রবার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ভবনের সামনে পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মােট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহন চালু সহ পাঁচ দফা দাবিতে ঈদের দিন সকাল ১০ থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
শাজাহান খান বলেন, এখন দূরপাল্লার বাস চালু করা জরুরি। কারণ যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছেন তারা আবার ফিরে আসবে। তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। সাত সিটের একটি মাইক্রোবাসে ১০ থেকে ১২ জন লোক গ্রামে যাচ্ছে। ১০ সিটের স্পিডবোটে গিয়ে ২৬ জন লোক মারা গেল। যারা গ্রামে গেছে তারা আবার ফিরে আসবে। তাই দ্রুত দূরপাল্লার বাস চালু করা জরুরি বলে তিনি জানান।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা আমরা পালন করি। সরকারও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে দেখেন। কিন্তু আমরা বলতে চাই যখন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়, তখন জেলেদের এক মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবহন যে এক মাস ৭ দিন বন্ধ, এসময় তো কোনো খাদ্য সহায়তা আমরা পেলাম না। যারা গত বছর পেয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন অনুদান পেয়েছেন।
যে অনুদান দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে শ্রমিকদের নেতা ও সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, পরিবহন খাতে আমাদের ৬০ থেকে ৭০ লাখ শ্রমিক রয়েছে; কিন্তু তাদের মধ্যে অনুদান পেয়েছে মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ। এটা খুবই সামান্য। আমরা সরকারের কাছে তালিকা পেশ করেছি, সেই অনুযায়ী সবাইকে অনুদান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পোশাক শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য ৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু পরিবহনের মতো এত বড় সেক্টরে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, পরিবহন খাতে প্রণোদনা দেওয়া হলে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতো মালিকরা। বর্তমানে বাস বন্ধ থাকায় পরিবহন মালিকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তাদের ঋণ এমনভাবে বাড়ছে কয়দিন পর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করবে ব্যাংক। এবিষয়টি দেখতে হবে। তাই আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা চাচ্ছি। কারণ দেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি সচল রাখে পরিবহন খাত।
সাবেক এ মন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪ ও ১৫ সালে সরকারবিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পরিবহন শ্রমিকরা মাঠে ছিল। ৯৩ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই সময় এক হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়ে মালিকদের সম্পদ নষ্ট করা হয়েছিল। ওই সময় প্রণোদনা দিয়েছিলেন এটা আমরা স্বীকার করি। আমরা সরকারের পাশে আছি, আগামীতেও থাকবো।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা আপনার সন্তানের মত, তারা এখন খুব কষ্টে আছেন। তাদের জন্য কি করবেন সেটা আপনিই ভালো জানেন। আমি আশা করবো আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আপনার কাছে যাবো, আশা করছি আপনি শ্রমিক-মালিকদের সহায়তা করবেন।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ভবনের সামনে অবস্থান নেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনানাল শ্রমিক কমিটি। কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলী সুবা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দীন সবুর, সয়দাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনানাল মালিক সমিতির সাবেক সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।