২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। এসবের নেপথ্যের কারিগর ও উদ্দেশ্য একই। গ্রেনেড হামলার ঘটনার আজ ১৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বেগম খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বেগম আইভি রহমান মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
হানিফ বলেন, পাকিস্তানি জায়ান্টরা জানত ১৯৭১ সালে তাদের যে পরাজয় হয়েছে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবে না কোনোদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও হরণ করতে পারবে না। সে কারণে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। জীবিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দেশে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগের হাল ধরে নতুন পথ চলা শুরু করেছিলেন। সে পথ চলার মাধ্যমেই আজ বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।
ক্ষমা না চেয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বহুবার বলেছি এ ঘটনা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। আমরা দেখি আগস্ট মাস এলেই বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনও মিথ্যাচার করে। আমি বহুবার বলেছি, মানুষ চলার পথে ভুল করতে পারে। রাজনীতি করতে গেলে ভুল হতে পারে। যদি সে ভুল স্বীকার করে কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায় এবং ভবিষ্যতে সুন্দর দিনের কথা বলে তাহলে তার জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব। বিএনপিকে বহুবার বলেছি, আপনারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে আপনারা জড়িত ছিলেন তার অজস্র প্রমাণ রেখে গেছেন। এ ঘটনার কথা স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করেন। হয়ত স্বজন হারানোরা ক্ষমা করবে না, তবে জনগণ ক্ষমা করলেও করতে পারে। সেটা না করে আপনার নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছেন।
লন্ডনে বসে স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ হবে না, তারেক রহমানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে হানিফ বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাওয়া ভবনে বসে জঙ্গিগোষ্ঠীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি। লুৎফুজ্জামান বাবর সেসময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তার সঙ্গে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা এবং জঙ্গিরা দফায় দফায় বৈঠক করে এ পরিকল্পনা করে। যারা ধরা পড়েছে, তাদের জবানবন্দিতে এ তথ্যগুলো বেরিয়েছে। লুকানোর কোনো উপায় নেই। সেদিন ঘটনা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। আর সে জন্য ২ ঘণ্টার মধ্যে আলামত নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।
রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশে হত্যার ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে এমন আশা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এ ঘটনায় যারা আহত-নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের প্রত্যাশা ছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসী তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ হবে। কিন্তু সেটি হয়নি, এজন্য অনেকের মনে কষ্ট আছে। তারপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা বিশ্বাস করি এ বিচারের মাধ্যমে দেশে হত্যার ষড়যন্ত্রের পথ বন্ধ হবে। ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দায়ভার বেগম খালেদা জিয়াকেও বহন করতে হবে। যদিও উনি বিচারের মধ্যে আসেননি, তারপরও তার এই দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আশা করছি এ রায় দ্রুত কার্যকর হবে। কার্যকরের মাধ্যমে দেশের সব হত্যা ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রহুল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার প্রমুখ।