রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না টেকনাফ ভূমি অফিসে:কানুনগোর অতিরিক্ত দায়িত্বে সার্ভেয়ার দেলোয়ার

জাফর আলম, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১১৬৮ পাঠক পড়েছে

টাকা দিলেই ফাইল নড়ে দেলোয়ারের টেবিল থেকে।ঘুষের কাছে হার মেনে চূড়ান্ত পর্ছা দলিলে রেজিষ্ট্রিও হচ্ছে।ভূমি অফিস থেকে প্রদেয় নকশায় ব্যাপক জালিয়াতি হলেও এই অফিসের বিগবসের এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অর্থের লোভে ভুমি কর্তাদের এই রুপ কাজে জমির প্রকৃত সত্ববানরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

শুধুই তাই নয়, দেলোয়ারের নেতৃত্বে দূর্নীতি পরায়ণরা অফিস কেন্দ্রীক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা নামজারি,আপিল,তদন্ত সহ প্রভৃতি কাজে অতিরিক্ত টাকার লোভে জমির পক্ষে বিপক্ষে তত্ত্ব ফাঁশ করে খতিয়ানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এতক্ষণ টেকনাফ ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দেলোয়ারের রাজত্বের কথা অনুসন্ধানে বলেছিলাম। কক্সবাজার জেলার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নিরহ জনসাধারণ ভূমিসংক্রান্ত সরকারি সেবায় নানা রকম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা সেবার নামে গরীব জনসাধারণের পকেট কাটছে বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ। ভূমি আইন বিরুধী অনৈতিক কর্মকান্ডে অসাধু চক্র তাদের ষুষ চাহিদার অপকর্ম চালিয়ে গেলেও উবর্ধতন কতৃপক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।অসাধু চক্রটিকে তাদের চাহিবামাত্র খায়েশ অবস্থাবান ও সম্পদশালীরা প্রয়োজনীয় কাজটি আদায় করে নিলেও গরীব,নিন্মবিত্তরা তাদের আবদার না মেটানোয় বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আটকা পড়ছে।

একাধিক ভূমি সেবাপ্রার্থীর অভিযোগ নামজারি মামলা,আপিল,জমি সংক্রান্ত তদন্ত, ডিসি আর ও দাখিলায় ঘুষের রেট আগের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।উপজেলা ভূমি অফিসে কানুনগো, সার্ভেয়ার সহ কয়েকজন সহকারী মিলে পুরো অফিসকে দূর্নীতির আখড়া বানিয়ে ছাড়ছেন।শাহপরীদ্বীপের মোঃ আমিন জানান,সার্ভেয়ারের টেবিলে আটকা পড়েছে তার একটি তামিলনামা।ঐ তামিলনামা চুড়ান্ত করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘুষ চান সার্ভেয়ার দেলোয়ার।দেলাওয়ারের পক্ষে কতিপয় উমেদার কাজটি সম্পাদন করার জন্য প্রথম ধাপে ৫ হাজার টাকা নিলেও কাজের অগ্রগতি সিকিভাগও হয়নি।উল্টো তামিল রিপোর্ট হাল নাগাদ হওয়ায় তার নামে সৃজিত নামজারি মামলাটি খারিজ হওয়ার দ্বার প্রান্তে।খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে নিজের পদের বাইরে কানুনগোর অতিরিক্ত দায়িত্বেও রয়েছে সার্ভেয়ার দেলোয়ার।কানুনগো আবুল আলম করোনা রোগে মারা যাওয়ায় প্রায় ৮ মাস ধরে এ দায়িত্বে থেকে খতিয়ান বানিজ্য সহ ভূমি সংক্রান্ত নানা কাজে টিকাদারীর ভূমিকা পালন করছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের দ্বিতীয় ব্যক্তি হওয়ায় সার্ভেয়ার দেলোয়ারের এখন মহা দাপট।অনেক নামজারি মামলা তার খায়েশ পূরণ করতে না পারায় স্তুুপ আকারে আটকা রয়েছে অভিযোগ করেছে নুরুছব্বি।তিনি কাকুতির সূরে জানান,সংশ্লিষ্ট তহসিলদার তার নামজারি ফাইলটি উপজেলা ভূমি অফিসে অগ্রবর্তি করার পর থেকে দেলোয়ারের আঙ্গাবহ উমেদার দালালদের কয়েকজন খতিয়ান চুড়ান্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করলেও তিনি তাতে সায় দেননি।এ কারণে ফাইলটি অগ্রবর্তি না করে উল্টো খারিজ করার হুমকি দিচ্ছেন। একই অভিযোগ করেছে মোবাশ্বেরা বেগমও।

তিনি জানান,গত ৫ মাস ধরে উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিতি রয়েছে তার।তার একটি জমাভাগ মামলা কানুনগোর কাছে প্রক্রিয়াধীন।কিন্তুু দায়িত্বপ্রাপ্ত কানুনগো দেলাওয়ার তার কাছে ১৫ হাজার টাকা চাওয়ায় এই গরীব মহিলার সাধ্যে কুলোয়নি।এর পরও তিনি পৈত্রিক সম্পত্তির চুড়ান্ত অংশীদার হতে বড় কর্তার কাছে ধরর্ণা দিচ্ছেন।টেকনাফ সদরের কে কে পাড়ার জাহেদ আহমেদ জানান,পৌর এলাকায় জমির নামজারিতে অত্যধিক অবৈধ লেনদেন হচ্ছে এই ভূমি অফিসে।এমনকি এক পক্ষের কাছথেকে ঘুষ নিয়েও অপর পক্ষকে উবর্ধতন কতৃপক্ষে অভিযোগ দেয়ার প্রলোবনে নিয়মিত উৎসাহ দিচ্ছে।সেন্টমার্টিন দ্বীপের শফি আলমের অভিযোগ ভিন্ন। তার অভিযোগ কানুনগো দেলোয়ারের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট চেইনম্যান জমি পরিমাপের পর মন্তব্য কলামে পরিমাপের বৃত্তান্ত তুলে দিলেও অফিসে গিয়ে ঐ মন্তব্য পত্রে ঘষামাজা করে তার জমির পরিমাণ হ্রাস করে দিয়েছেন।কানুনগোই বিধিবহির্ভূত এ কাজের রুপকার বলে জানান তিনি।

হ্নীলা ইউনিয়নের খাঙ্জর পাড়ার গুলচেহের বেগম বলেন,স্বামীর মৃত্যের পর পুরো ভিটিবাড়ি ও জমির দাখিলা ও ডিসি আর সরকারি মুল্যের রশিদ নিলেও ফ্রি বছর তার কাছথেকে তিনগুণ মুল্য নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।এ কাজটি কানুনগো সার্ভেয়ারের না হলেও তাদের পক্ষে আপত্তি উত্তাপনের হুমকি দিয়ে এ পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে।জামতলীর সিরাজুদ্দৌলা জানান, টেকনাফ উপজেলায় সরকারি ভূমিতে গড়ে উঠা বিভিন্ন বাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।পেরফেরি ভুক্ত জমিতে ব্যবসা পরিচালনায় রশিদের মাধ্যমে সরকারি ফ্রি আদায়ের নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে কোন রশিদ দেয়া হয় না।অফিস সহায়কদের কয়েকজন পালাক্রমে গিয়ে উবর্ধতন কর্তাদের নামে অবৈধ টাকা হাসিলের অভিযোগ রয়েছে।টেকনাফ উপজেলায় রয়েছে সদর সহ তিনটি তহসিল অফিস। এসব অফিসের কোনটিতে পুর্নাঙ্গ তহসিলদার থাকলেও কেনটিতে নেই।কোথাও কোথাও অফিস সহায়করাই থাকেন তহসিলদারের ভূমিকায়।একদিকে সার্ভেয়ার দেলোয়ারের অবৈধ টাকার খায়েশ অন্যদিকে ঘাটে ঘাটে টাকা না দিলে জমির কাজের পুরো সমাপ্তি ঘটছে না এসব অফিসে।ফলে তিনটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১০ টি মৌজার প্রায় অর্ধলক্ষ জমি ও ভূসম্পত্তির মালিক ভূমি অফিসে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি, প্রতারণা ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।

সরকারি আইন কানুনকে তোড়ায় কেয়ার করেন সার্ভেয়ার দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা।অফিসে তাদের সিন্ডিকেটেরই জয়জয়কার।
একই অফিসের দায়িত্বশীল অন্যরা তাদের অনিয়ম দূর্নীতির টুনকো প্রতিবাদ করলেও পরে অবস্থা দাঁড়ায় বেগতিক।প্রতিবাদকারীদের শাসাতে তাদের বড়কর্তার আশ্রয় নেন তারা।এ কারণে প্রায়শ উপজেলা ভূমি অফিসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির শিকার হয় বলে জানান,এমন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাটমূড়া পাড়ার রবি আলম,আলি হালির জসিম উদ্দিন ও সাবরাং নয়াপাড়ার রবুওয়া বিবি।ফলে অফিসের কর্তা- কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ তাদের।মাঠ কেন্দ্রীক ভূমি ব্যবস্হাপনা চরম মার খায় উপজেলা ভূমি অফিসে। সার্ভেয়ার দেলোয়ারই শুধু নন বিধি ভঙ্গের এরুপ কর্মযজ্ঞে আরেক দূর্নীতিবাজ রয়েছে। নাম তার জোবায়ের।অফিস সহকারী পদবীর এই জোবায়ের জেলার যে অফিসেই চাকুরী করেছে সেখানেই বিপত্তি বাঁধিয়েছে।

টাকা খেকো হিসাবে নামযশধারী এই জোবায়ের নাকি সরকার বিরুধী।রাজনীতিতে এই তকমাধার জোবায়েরের টেবিলে টাকা সাড়া সেবা পাওয়া দুষ্কর।টাকা দিয়েও রক্ষা হয় না ভূমির মালিকদের।তার অধীনে থাকা সব কাজেই অতিরিক্ত ঘুষ নেন উবর্ধতন কর্তার নাম বিকিয়ে।টেকনাফ উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন,ভূমি সেবাপ্রাপ্তিদের ভোগান্তি লাগবে একমাত্র অবলম্বন এই অফিসের দন্ডমুন্ডের কর্তা এসিল্যান্ড।কিন্তুু চিহ্নিত দূর্নীতিবাজরা তাদের দাপট বেহিসাবি কর্মকাণ্ড ও নগদ নজরানার ওপেন কাজ করতে গিয়ে এই বড় কর্তাকে ফুসলিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন সুকৌশলে।তারা উদ্বট তথ্য ও বেঘুরে রেখে ভূমি অফিসে সেবাপ্রাপ্তিদের প্রায় জিন্মদশায় বন্দি রেখেছেন। উপজেলাবাসী ভূমি অফিসকে একটি স্বচ্ছ ও দূর্নীতি মুক্ত করতে ভূমি মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান।এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার দেলোয়ারকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান,জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কানুনগোর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে আমার উবর্ধতনকে বলুন।আপনার অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না বলে ফোন লাইন কেটে দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580