বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চুনতি রেঞ্জের বিট কর্মকর্তাসহ ৫ বনকর্মী গনধোলাইয়ের শিকার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ২২ মে, ২০২২
  • ৯২৯ পাঠক পড়েছে

সংরক্ষিত বনভূমিতে ঘর তৈরির সুযোগ দিয়ে ঘুষ আদায় প্রাক্কালে

চকরিয়ায় রাতের আঁধারে টাকা চাইতে গিয়ে গনধোলাই দিয়ে বেঁধে রাখা হলে বনবিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমান সহ ৫ বনকর্মীকে উদ্ধার করেছে হারবাং পুলিশ। উদ্ধার হওয়ার ২৪ ঘন্টা পার হলেও থানায় মামলা করছেন না উদ্ধার হয়ে আসা বনকর্মিরা। তাঁদের দাবীশরীরে দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন নাই, হাসপাতালের চিকিৎসা স্লিপ না থাকায় থানা পুলিশের নিকট মামলা করবেন না তাঁরা। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা সংশ্লিষ্টদের বনকর্মীদের বনভুমি দখল-বিক্রী দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

গোপনে মিটমাটের চেষ্টা করেও সাংবাদিকরা জেনে যাওয়ায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন বনবিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমান সহ আহত ৫ বনকর্মী। বৃহস্পতিবার ১৯ মে রাত ৮ টায় চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চুনতি অভয়ারন্যের উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিল বড়ুয়া পাড়া শ্মশান সংলগ্ন দোকানের সামনের বনভুমিতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চুনতি রেঞ্জ অফিস থেকে চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাং হোছাইন চুনতি বনরেঞ্জের কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত ফরেস্টার শাহীনুর রহমান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন সহ চুনতি বনরেঞ্জের বনকর্মী, ভিলেজার হারবাং পুলিশ বিটের এএসআই মুনির এর নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্সসহ ২০/৩০ জন এসে বনবিট কর্মকর্তা সহ ৫ বনকর্মিকে উদ্ধার করে নির্মানাধীন ঘরের কাঁচা দেয়ালের একাংশ ভেঙ্গে দিয়ে প্রতিশোধ নেন। ঘটনায় আহত বনবিট কর্মকর্তা শফিক বলেন, শরীরে দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন না থাকায় তারা থানা পুলিশের নিকট মামলা করবেন না। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোছাইন। তিনি বলেন, আহত বনকর্মিদের শরীরে দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন না থাকায় থানা পুলিশের নিকট মামলা করবেন না। তবে ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে বনমামলার প্রক্রিয়া চালাতে আহত বন বিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে, চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোছাইন চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিন আলম জানিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনভুমিতে বৃহস্পতিবার রাত আটটায় উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিল বনভুমিতে ঘর উচ্ছেদে যায় ৫ বনকর্মী। এসময় ওই এলাকার চিহ্নিত একদল বনদস্যুর নেতৃত্বে বনবিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমান সহ ৫ বনকর্মীকে মারধর করে আটক করে রাখে।

খবর পেয়ে চুনতি রেঞ্জ অফিস থেকে চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোছাইন চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান, স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন সহ চুনতি বনরেঞ্জের বনকর্মী, ভিলেজার হারবাং পুলিশ বিটের এএসআই মুনির এর নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্সসহ ২০/৩০ জন এসে বনবিট কর্মকর্তা সহ ৫ বনকর্মিকে উদ্ধার করে নির্মানাধীন ঘরের কাঁচা দেয়ালের একাংশ ভেঙ্গে দিয়ে প্রতিশোধ নেন।

গৃহকর্তৃ পপন বড়ুয়া জানান, বনবিট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের কথামতো বিট কর্মকর্তার সোর্স নেজাম উদ্দীনের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তা শফিকুলকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পুরানো ঘর মেরামতের অনুমতি নেন তারা। অনুমতি নিয়েই বেড়ার ঘর খুলে সেমিপাকা ঘর বাঁধা শুরু করে সুধির বড়ুয়ার জামাই ডাঃ বিকাশ বড়ুয়া। এরইমধ্যে ১৫ দিন যেতে না যেতেই আবারো এসে টাকা দাবী করছিল এফজি ইউসুফ প্রকাশ ক্যাশিয়ার ইউসুফ। টাকা না দেয়ায় বিট কর্মকর্তা সফিকের নেতৃত্বে ৫ জন বনকর্মি এসে বলেন নেজাম উদ্দিন বিট কর্মকর্তাকে টাকা দেয় নাই। টাকা না দিলে ঘর বাঁধা যাবে না।

দোকানের সামনেই দুইপক্ষের সাথে কথাকাটাকাটি। সোহাগ নামের এক কিশোর এসময় উভয় পক্ষের কথা ভিড়িও করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে গনি সহ কয়েকজন ব্যাক্তি এফজি উজ্জল বাওয়ালকে কিলঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিলে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল কিলঘুষি মারামারি হয়। গৃহকর্তা সুধির বাবু ও তার স্ত্রী পুপন বড়ুয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে বিট কর্মকর্তার কথিত সোর্স নেজাম উদ্দীনকে ফোন দিয়ে মারামারির কথা বললে নেজাম উদ্দীন বনকর্মিদেরকে আরো মারধর করতে বলেন। তার কথায় এলাকাবাসী বিট কর্মকর্তা সফিক সহ সকলকে ঘিরে রাখলে খবর পেয়ে চুনতি রেঞ্জ অফিস থেকে চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাং হোছাইন পুলিশ ফোর্সসহ ২০/৩০ জন এসে বনবিট কর্মকর্তা সহ ৫ বনকর্মিকে উদ্ধার করে নির্মানাধীন সুধির বড়ুয়ার জামাই ডাঃ বিকাশ বড়ুয়ার সদ্য নির্মান করা বাড়ীর কাঁচা দেয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন। বাধা দেয়ায় ৪/৫ জন কিশোর-নারী-পুরুষকে মারধর করেন।

সুধির বড়ুয়ার স্ত্রী পুপন বড়ুয়ার দাবী এক বছর আগে থেকে কন্ট্রাকে টাকা নিয়ে ঘর বাঁধার অনুমতি নিয়েছিলেন তিনি। টাকা নিয়েও আরো পাওয়ার জন্য বেঈমানী করছেন বিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমান। এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, নেজাম তাদের কোন সোর্স নয় সে একজন সন্ত্রাসী ও পলাতক আসামী। তার হুকুমে এলাকাবাসী হামলা করে তিনি, তাঁর এফজি ইউচুপ, নিলীমেশ, উজ্জল ভাওয়াল,মামুনুর রশিদ আহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বন আইনে একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এ বিট কর্মকর্তা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, সংশ্লিষ্ট চুনতি অভয়ারন্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাং হোছাইন। তিনি আরো বলেন, আহত বনকর্মিদের শরীরে দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন না থাকায় থানা পুলিশের নিকট মামলা করবেন না তারা। তবে ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরোদ্ধে বনমামলার প্রক্রিয়া চালাতে সংশ্লিষ্ট বন বিট কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580