চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেলোয়ার হোসেন (৬৫) নামে এক রোগী মৃত্যুবরন করেছেন।
স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী কুলসুমা বেগম অতি শোকে কাতর হয়ে ছুরি হাতে নিয়ে হাসপাতালে থাকা ডাক্তার ও নার্সদের সহ অন্যান্য রোগীর স্বজনদের আঘাত করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
শুক্রবার বেলা ১২ টায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ২য় তলার আইসোলেশন ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দেলোয়ার হোসেন চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রুপসা গ্রামের জালাল বাশারের ছেলে।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মিশন বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, গত তিন-চার দিন ধরে কুলসুমা বেগম তার করোনায় আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোনো আত্মীয়-স্বজন খোঁজখবর না রাখায় এবং তাকে হাসপাতালে দেখতে না আসায় তিনি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তার স্বামীর অক্সিজেন লেভেলও অনেকটা কম ছিলো। যার কারনে তিনি শুক্রবার বেলা বারোটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চোখের সামনে মুহূর্তেই স্বামীর এমন মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তিনি মানসিকভাবে আঘাতে পেয়ে অতি শোকে কাতর হয়ে ফল কাটার ছুরি নিয়ে ডাক্তার এবং নার্সদের ধাওয়া করেন। একই সাথে হাসপাতালে থাকা অন্যান্য রোগীর স্বজনদেরকেও ছুরি উঠিয়ে ভয় দেখান। প্রায় ১০/১৫ মিনিট যাবৎ ছুরি নিয়ে এমন ধাওয়া করে একসময় নিজেই জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।
এমন ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই শাহরিণ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়।
নিহত দেলোয়ার হোসেনের ভাগিনা নজরুল ইসলাম জানান, তার মামা দীর্ঘদিন যাবত কুয়েতে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার শরীরে বিভিন্ন রোগ ধরা পড়ে। এসব রোগ থেকে সুস্থ হতে সেখানে চিকিৎসা করালেও তিনি কোনোভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তাই চিকিৎসার জন্য গত চার-পাঁচ বছর আগে কুয়েত থেকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে জানায় গত ৪ দিন পূর্বে তার মামা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন।
ঘটনার দিন ডাঃ নাভিয়া তাহসিন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও করোনা ফোকাল পার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, মৃত রোগীটা গত দুই ১ দিন পূর্বে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। তার অক্সিজেন লেবেল অনেক কম ছিলো। যা ৬৫.১ পার্সেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। অক্সিজেন লেবেল অনেক কমে যাওয়ায় শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। আমরা শুনেছি তার স্ত্রী ফল কাটার ছুরি নিয়ে মানুষকে ধাওয়া করেছে। এতে তিনি অতি শোকে ভায়োলেন্ট হয়ে এমনটা করেছেন। পরে কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি অচেতন হয়ে পড়ে।