কখনো রিকশাচালক কখনো বা স্বল্প আয়ের কোনো পেশাজীবীর সাজে এভাবেই ছদ্মবেশ ধারণ করে ৫ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আব্দুর রহমান ওরফে চান্দু মিয়া।
সোমবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় সাভারের গেন্ডা এলাকার কবরস্থানের পাশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
সে ২০১৫ সালের রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার চাঞ্চল্যকর খাদেম রহমত আলী হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং জেএমবির ইসাবা গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
এটিইউর দাবি, বর্তমানেও জেএমবির সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলো না আব্দুর রহমান। মঙ্গলবার (২৫ মে) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পুলিশ সুপার (মিডিয়া এন্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নিহত খাদেম রহমত আলীর কাউনিয়া থানাধীন চৈতার মোড়ে একটি ঔষধের দোকান ছিল। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে খাদেম রহমত আলী বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে জেএমবি সদস্যরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেএমবি সদস্যদের দ্বারা এ হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার প্রমাণ পায়। নিহত খাদেম রহমত আলী সুরেশ্বরী তরিকা পালন করতেন। তার বাড়ির পাশে তার পিতা-মাতার কবরকে মাজার ঘোষণা করে তিনি মাজার ও মসজিদ সংলগ্ন একটি দরবার শরীফ ঘর তৈরি করে।
বৃহস্পতিবার সুরেশ্বরী তরিকত মোতাবেক অনুসারীদের নিয়ে জিকির করতেন। জেএমবি সদস্যদের দাবি, রহমত আলী একজন ভন্ড পীর, শিরককারী এবং দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তাকে হত্যা করা আবশ্যক।
আসলাম খান আরো বলেন, ঘটনার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালে ৩০ শে জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ বিজ্ঞ আদালত রায় প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত এ মামলায় ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলো, মো. মাসুদ রানা ওরফে মন্ত্রী, বিজয় ওরফে মো. মোহাদ্দেস আলী ওরফে দর্জি, মো. লিটন মিয়া ওরফে রফিক, মো. ইসাহাক আলী, মো. চান্দুমিয়া ওরফে আব্দুর রহমান, মো. সাখাওয়াত হোসেন ওরফে শফিক, মো. সারোয়ার হোসাইন ওরফে মিজান ওরফে ড্রাইভার।
এ মামলায় আব্দুর রহমান ওরফে চান্দুমিয়া ব্যতীত বাকী সবাই বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছে। আব্দুর রহমান কৌশলে দীর্ঘ দিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে পালিয়ে ছিল।
আসামি আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির ইসাবা গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির কয়েকজন সদস্যের নাম জানা গেছে যারা বর্তমানে গোপনে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
খাদেম রহমত আলী হত্যার পর কাউনিয়া থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় আব্দুর রহমানকে আদালতে সোপর্দ করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এটিইউয়ের এ কর্মকর্তা।