সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

টাঙ্গাইল বন বিভাগের করতিয়া চেক বিট অরক্ষিত

বিশেষ প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৭৩২ পাঠক পড়েছে

ঘুষের বিনিময়ে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বনজ সামগ্রী

টাঙ্গাইল বন বিভাগের করতিয়া চেক বিট অরক্ষিত

টাঙ্গাইল বন বিভাগাধীন করতিয়া চেক বিটে চলছে সীমাহীন অনিয়ম। উত্তরবঙ্গের সমগ্র বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে আহরিত চোরাই কাঠ সহ সকল ধরনের বনজ পণ্য এই বিট দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ কালীন গাড়ি প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে ছেড়ে দেয়ায় প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার বনজ দ্রব্য পাচার হচ্ছে। ফলে বন বিভাগ ও মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিটের দায়িত্ব প্রাপ্ত ফরেস্টার সোলায়মান’র নেতৃত্বে প্রতিদিনই এই বিটে চোরাই বনজ দ্রব্য বাহী গাড়ী থেকে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ আদায় হলেও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশ বন বিভাগের বগুড়া অঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ সহ টাঙ্গাইল, জামালপুর থেকে সামাজিক বন বিভাগের বাঁশ, কাঠ সহ বিভিন্ন বনজদ্রব্য অবৈধভাবে আহরণ করে ট্রাক, লরি, কভার ভ্যান, পিকআপ যোগে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে আসে। বনজদ্রব্য ভর্তি গাড়িগুলোতে যে ট্রানজিট পাস (টিপি) উক্ত চেক বিট অফিসে প্রদর্শন করা হয় তার বেশিরভাগ গাড়িতে টিপিতে উল্লেখিত কাঠের মাপ, পরিমাপ, জাতে’র কোন মিল থাকে না। চেক বিটের কাজ হচ্ছে বনজদ্রব্য ভর্তি গাড়ী সমূহের প্রদর্শিত টিপি অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

টিপি বহির্ভূত কোন বনজদ্রব্য আসলেই গাড়ি জব্দ করে মামলা দিতে হবে। কিন্তু এই চেক বিটে গাড়ীপ্রতি প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আবার টিপি ছাড়া আগত সম্পূর্ণ চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক থেকে ক্ষেত্রবিশেষ ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। এই চেক বিট থেকে চেকিং করে সবকিছু ঠিক আছে বলে ছেড়ে দেয়ার পর সম্প্রতি পরবর্তী স্টেশন কালিয়াকৈরে ঐ গাড়ি চেক করে অবৈধ চোরাই কাঠ ভর্তি কাঠ ধরে গাড়ি জব্দসহ মামলা দেয়ার ও ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় করতিয়া চেক বিটে কি ধরনের চেকিং হচ্ছে।

অনুসন্ধানকালীন দেখা যায় চোরাই কাঠ ভর্তি যানবাহন আটকিয়ে ফরেস্টার সোলায়মান একটু দূরবর্তী জায়গায় নিয়ে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে চার্জশিট/ ফাইনাল করছেন। সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের যে কোন কর্মকর্তা গোপন বা প্রকাশ্য অনুসন্ধান চালালে এর সত্যতা মিলবে। হাতেনাতে ঘুষসহ ধরা যাবে। দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ফরেস্টার সোলায়মানকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ফরেস্টার সোলায়মান এই চেক বিটে নিয়োগ পাবার পর কয়েক কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেছেন। তার দীর্ঘ চাকুরী জীবনে ঘুষ দুর্ণীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বাড়ি সিরাজগঞ্জে বিলাসবহুল বাড়ি, কয়েক বিঘা জমির মালিক হয়েছেন।

শুধু তাই নয় সন্তানদের রাজধানী ঢাকার নামিদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তার জীবন যাত্রার মান খোদ ডিএফও’র জীবন যাত্রার মানকেও হার মানায়। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ফরেস্টার সোলায়মান ১৫ তম গ্রেডের একজন ছোট কর্মকর্তা হিসেবে সর্বসাকুল্যে বেতন পান ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি প্রতি মাসে তার জীবনযাত্রায় ব্যয় করেন কয়েক লক্ষ টাকা। তার এই অবৈধ আয়ের বিষয়ে অনুসন্ধান চালালে সহজেই বেরিয়ে আসবে চেক বিট থেকে কিভাবে প্রতিনিয়ত কত গাড়ি অবৈধভাবে পয়সার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বন বিভাগ কত কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চোরাই বনজ সামগ্রী পাচার রোধে অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580