ডিএনএ পরীক্ষা এড়াতে বাদিনীকে নানা রকম প্রলোভন দেখাচ্ছে ধর্ষণ মামলার আসামী ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) এর ডাক্তার আব্দুস সালাম। আপোষ মিমাংসার জন্য ৪০ লাখ টাকার প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করায় তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে জানা গেছে। গত ৪/৪/২০২১ তারিখে নারী ও শিশু পিটিশন মামলা নং ৯৬/২০২০ এর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিআইডিকে ডাক্তার আব্দুস সালামের ডিএনএ টেস্ট করে আগামী ২৮ অক্টোবর ২১ আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডাক্তার আব্দুস সালাম কোন অবস্থাতেই ডিএনএ পরীক্ষা করাতে রাজি নয়।
জানা যায়, ধর্ষণ মামলার আসামী জাতীয় অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এর অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুস সালামের ডিএনএ টেস্ট দ্রুত করাতে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২, ঢাকা এর আদালত। গত ৯ সেপ্টেম্বর ডিএনএ টেস্ট করানোর আদেশের শুনানী শেষে আদালত এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, গত ৪/৪/২০২১ তারিখে নারী ও শিশু পিটিশন মামলা নং ৯৬/২০২০ এর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিআইডিকে ডাক্তার আব্দুস সালামের ডিএনএ টেস্ট করাতে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ ৫ মাসেও ডিএনএ টেস্টের কার্যক্রম না করায় আদালত পুনরায় সিআইডিকে এ তাগিদ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার প্রাইম অর্থোপেডিক্স ও জেনারেল হাসপাতাল ডায়াগনস্ট্রিক-এ নার্স হিসাবে দীর্ঘদিন থেকে চাকুরী করতেন জান্নাতুল ফেরদৌস আসমা (৩২)। আসমার স্বামী মো. কামাল নেশাগ্রস্থ জানতে পেরে পারিবারিক সমঝোতার মাধমে ২০১৬ সালের শেষ দিকে আসমার সাথে তার স্বামীর কামালের ডিভোর্স হয়। স্বামী পরিত্যাক্তা আসমার দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও জাতীয় অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুস সালাম (৫৫)-এর। বাদিনী আসমা একই প্রতিষ্ঠানে ওটি এসিসটেন্ট পদে কর্মরত থাকার সুবাদে আসমাকে কাজের খাতিরে ডাঃ সালামের নিকট আসা যাওয়া করতে হতো। সেই সুযোগে ডাঃ সালাম ওটি এসিটেন্ট আসমাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিত ও সেই সাথে নানা ধরনের প্রলোভন দেখাত। বাদিনী তার কুপ্রস্তব বরাবর প্রত্যাখান করে আসছিল।
এক পর্যায়ে আসামী ডাঃ আব্দুস সালাম গত ২০.জানুয়ারি .২০১৭ইং তারিখে আসমাকে জরুরী কাজের কথা বলে তার পঙ্গু হাসপাতালের সরকারী কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে কোমল পানির সাথে সুকৌশলে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়ে ধর্ষণ করে এবং আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। আসমার জ্ঞান ফিরে আসলে তার কাপড়-চোপড় খোলা ও এলোমেলো দেখে ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে কান্না করলে কৌশলী ডাঃ আব্দুস সালাম তাকে বিবাহ করার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় য়ে, আসামী বাদিনী আসমাকে বিবাহের কথা বলে প্রায়ই ধর্ষন করত এবং কোন প্রকার বৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বাদিনীকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে। এভাবে দীর্ঘদিন চলার ফলে আসমা গর্ভবতী হয়ে পড়লে তা সে আসামী ডাঃ সালামকে জানায়। পূর্বের ন্যায় আসামী ডাঃ সালাম তাকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই কালক্ষেপন করতে থাকে। এর মধ্যে আসামী কৌশলে কিছু কাগজে বাদিনী আসমার স্বাক্ষর নিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে ১৭.০৬.২০১৮ইং তারিখে ভুক্তভোগী ওটি এসিসটেন্ট আসমা একটি পুত্র সন্তানের জš§ দেন।
ডাঃ সালামকে স্বামী ভেবে পিতার নামের সাথে মিল রেখে আসমা তার পুত্রের নাম রাখেন সিহাব। কিন্তু সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখতে থাকা আসমার সন্তানের বাবা যে একজন প্রতারক সেটি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। আসমার সন্তানের বয়স দুই বছর হয়ে গেলেও আসামী ডাঃ সালামের বিয়ে নিয়ে কোন মাথাব্যাথা ছিলনা লক্ষ্য করে বাদিনী আবারো তাকে ও তার সন্তানের সমাজে বৈধ পরিচয়ের কথা বললে আসামী ডাঃ সালাম আসমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করে এবং সাফ জানিয়ে দেয় যে, সিহাব তার সন্তান না। এবং বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেয়, তা না হলে তার কাছে থাকা অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। নিরুপায় হয়ে আসমা গত ০৯.১১.২০২০ইং তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১) ধারায় ঢাকার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল নং-২ এ মামলা দায়ের করেন।
আদালত উক্ত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পি.বি.আই) কে প্রদান করলে গত ২২.১২.২০২১ইং তারিখে পি.বি.আই মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত নিষ্পত্তি করতে না পেরে ডিএনএ টেস্ট করার মতামত দেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন বাদিনী পক্ষের নিকট সন্তোষজনক না হওয়ায় বাদী আসমা পি.বি.আই কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে না-রাজি আবেদন করেন। বাদিনীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সি.আই.ডি-কে উঘঅ পরীক্ষার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার দীর্ঘসুত্রিতার কারণে ভূক্তোভোগী, অসহায় আসমা ছোট্ট শিশু সন্তান সিহাবকে নিয়ে চরম হতাশায় দিন যাপন করছেন। এ বিষয়ে প্রফেসর ডাক্তার আব্দুস সালাম ডিএনএ টেস্ট কেন করছেন না জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন বাদিনীর সাথে কম্প্রোমাইজ হয়েছে। আপনার সাথে পরে কথা বলবো।