রাজধানী ঢাকায় ১ এপ্রিল চালু হচ্ছে না কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস। গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কোম্পানিভিত্তিক বাসের প্রথম রুট চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ না হওয়ায় মালিকপক্ষ যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট চালুর নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে এলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি রুটটিতে চলাচলের জন্য বাস কোম্পানিও এখনো গঠিত হয়নি। এছাড়া সম্পন্ন হয়নি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে কাজটি সঠিকভাবে করা উচিত। আর বাসমালিক নেতারা বলছেন, সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে এই সার্ভিস চালুর জন্য অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বাস রুট নিয়ে এক সভায় ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কোম্পানিভিত্তিক বাসের প্রথম রুট চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সর্বশেষ সভায় দক্ষিণ সিটি মেয়র নিজেই পরীক্ষামূলক রুটটি এপ্রিলের প্রথম দিন চালু করা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর জন্য ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশন’ কমিটি গঠন করে দিয়েছে; যে কমিটি পরীক্ষামূলক রুটটি প্রবর্তনের জন্য কাজ করছে। ডিএসসিসির মেয়র পদাধিকারবলে এই কমিটির সভাপতি হয়েছেন। বাসমালিকরা রুটটির জন্য তিন কোম্পানির ২০৭টি বাস নিয়ে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রজনীগন্ধা পরিবহনের ১২২টি বাস, মিডলাইন পরিবহনের ৫২টি বাস ও মালঞ্চ ট্রান্সপোর্টের ৩৩টি বাস রয়েছে। পরীক্ষামূলক রুটটিতে বর্তমানে কোনো বাস চলছে না জানিয়েছেন বাসমালিকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবহন মালিক সমিতি যে ২০৭টি বাসের তালিকা প্রস্তুত করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই বেশ পুরনো, রঙচটা ও ত্রুটিপূর্ণ। সে কারণে বাসগুলো পরিচালনার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা প্রয়োজন। এজন্য বাসমালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বল্পসুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, পরীক্ষামূলক রুটটির জন্য কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এছাড়া এ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীতে কোম্পানিভিত্তিক ছয় রঙের বাস চলবে। পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের। রুটটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হবে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। এ রুটটি থেকে আয়ের অর্থ কোম্পানির অংশীদারদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হবে। জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির অধীনে থাকা বাসগুলোর চালক-শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তাঁদেরকে কোনো ধরনের চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া যাবে না; চালক-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ হবে দৈনিক বা মাসিক হিসেবে এবং প্রত্যেককে নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে। সার্বিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক এ রুট চালুর ক্ষেত্রে আরো কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। রুটটিতে হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো যাত্রীবাহী ছোট ছোট অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট চালুর আগে এসব যানবাহনের মালিক বা চালকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। র্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এছাড়া ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের বিভিন্ন অংশে অন্য রুটের অনেক বাস চলাচল করে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক রুটটিতে অন্য বাসও ঢুকে পড়বে। র্যাশনালাইজেশন কমিটি এই জটিলতা এড়াতেও কাজ করছে বলে সূত্র জানায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষামূলক রুটটিতে কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনা করার জন্য টিকিট কাউন্টার, পার্কিংয়ের স্থানসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। এজন্য কোথায় কী করতে হবে, তা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কাজও শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ শেষ না করে রুট চালু করা হলে পরবর্তী সময়ে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এজন্য তাড়াহুড়ো নয়, প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে কাজটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্য ড. এস এম সালেহ্ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর ক্ষেত্রে মালিকদেরকে ব্যাংকঋণ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঋণ অনুমোদন হওয়ার পর মালিকরা তাদের বাসগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। তবে কাজটি সময়সাপেক্ষ। এজন্য আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এ অবস্থায় ১ এপ্রিলের মধ্যে ঋণ অনুমোদন ও বাসগুলো চলাচলের উপযোগী করে তোলা কিছুটা কঠিন বলে মন্তব্য করেন ড. সালেহ্ উদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্যাহ বলেন, মেয়র প্রতিশ্রুত ব্যাংকঋণ এখনো মঞ্জুর হয়নি। সম্পন্ন হয়নি অনেক অবকাঠামো নির্মাণ কাজও। এছাড়া আনুসঙ্গিক আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু হতে আরো অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।