শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

দুদকের ছাড়পত্রের পর পুনঃ তদন্তের আবেদন

ইসতিয়াক ইসতি:
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ৭ মে, ২০২২
  • ৭৯০ পাঠক পড়েছে

এলজিইডি‘র পিডি মিজানের বিরুদ্ধে

দুর্নীতির কারনে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি)‘র আলোচিত নাম প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান ওরফে মিজান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করলেও চতুর মিজান সব ম্যানেজ করে দায়মুক্তির ছাড়পত্র হাতিয়ে নেন। দুদকের ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চত করেছেন, সরকারি ছুটি থাকায় বিষয়টির সত্যাতা যাচাইয়ের জন্য দুদকের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এই দায়মুক্তি নিতে অনেক খরচ হয়েছে জানিয়ে মিজান ঠিকাদারদের দিচ্ছেন অতিরিক্ত উৎকোচের চাপ। দুদক থেকে অব্যহতির বিষয়টি জানাজানি হলে হতবাক হয়ে যান অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে চলছে এলজিইডি ভবনে কানাঘুষা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানায়, দুর্নীতির এতো প্রমাণ থাকার পরেও কিভাবে মিজান ছাড় পেয়েছে এটা আমাদের বোধগম্য নয়। দুদকের তদন্ত নিয়েও তাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পুনরায় তদন্তের জন্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা পরিবর্তনপূর্বক নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত অনিয়ম দূর্ণীতির নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমানের নানা অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এবিষয়ে তৎকালীন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ১৭ই অক্টোবর দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয় হতে লিখিত এক পত্র দেওয়া হয়। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থ বছরের দেশের ২৮৭টি পৌর সভায় বরাদ্দ দেয়া অর্থের তালিকা, মিজানুর রহমানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কার্যকাল, কোন কোন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তিনি, তার তালিকা চান দুদক এবং ২৪ নভেম্বরের মধ্যে রেকর্ডপত্র দুদকের সহকারি পরিচালক মো: আবদুল ওয়াদুদের নিকট পৌঁছানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে অনুরোধ করা হয়।

দুদকের কাছে জমা পড়া অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমানের দেশের বিভিন্ন পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উঠে আসে। দুদকের কাছে আসা অভিযোগে বলা হয়, এলজিইডির আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় ২৮৭টি পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য ‘ক’ শ্রেণি পৌরসভার জন্য ১৪ কোটি টাকা, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য ১০ কোটি এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য আট কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে উল্লিখিত প্রকল্প থেকে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য সাত কোটি টাকা, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য পাঁচ কোটি টাকা এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য চার কোটি টাকার দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। এভাবে ২৮৭টি পৌরসভার মধ্যে যেসব পৌরসভা নির্ধারিত চাহিদামতো ঘুষ দেয় শুধু তাদেরই দরপত্র আহ্বানের অনুমতি দেন উল্লিখিত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান।

অভিযোগে আরও উল্লেখ্য করা হয়, প্রতিটি পৌরসভায় বরাদ্দ অনুমোদনের পূর্বে ২ শতাংশ হারে মিজানুর রহমান ঘুষ গ্রহণ করেন এবং প্রতিটি পৌরসভার মেয়র, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানের অফিসে ঘুষের টাকা পৌঁছে দেন। এ জন্য তিনি এক শ্রেণির দালালও নিয়োগ করেন এবং তাদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা আদায় করেন কাজী মিজানুর রহমান। কাজী মিজানুর রহমান বৃহত্তর বরিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর জেলার ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন সেন্টার প্রকল্প, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঝালকাঠীসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

এসব প্রকল্পসমূহে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয়ে কেনাকাটা, ভুয়া বিল-ভাউচার, অর্থ ছাড়ে উৎকোচ আদায়, অর্থ বরাদ্দে উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে মিজানের বিরুদ্ধে। নিয়মানুযায়ী একজন প্রকল্প পরিচালক একটির বেশি প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না এবং এই বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একাধিকবার তাগিদ দিলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে কাজী মিজানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এলজিইডির সূত্র আরও জানায়ায়, মিজানুর রহমান ২০১৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলে তাকে রাঙ্গামাটি অঞ্চলে পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি মাসে দুই থেকে তিন দিনের বেশি রাঙ্গামাটিতে অফিস করতে না সে সময়। পিডি থেকে পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলেও তিনি পিডি পদে আরো দু’বছর থাকতে চান এমন তদবির নিয়ে নিজ কর্মস্থলে অফিস না করে সে সময় ঢাকায় সচিবালয়ে তদবিরে চালানোর কাজে বেশি মনযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ জন্য ১০ কোটি টাকা নিয়ে সেসময় মাঠে নামেন কাজী মিজানুর রহমান।

সরকারের একাধিক মন্ত্রী দিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে ফোন করানো । সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে এলজিডি সচিবের নিকট তদবিরের বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে। কাজী মিজানের বেনামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে এবং নিজ এলাকা নড়াইলে তার আত্মীয়স্বজনদের নামে প্রচুর সম্পদ ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন। এছাড়াও ধানমন্ডি ৩ নম্বর রোডে বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন কাজী মিজানুর । যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এলজিইডি’র পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবিরের সাথে যোগাযোগা করলে তিনি আজকের সংবাদ’কে জানান, বর্তমানে আমরা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোঠর অবস্থানে গ্রহণ করেছেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ । তবে কাজী মিজানুর এর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাজী মিজানুর রহমান কে নিয়ে আমরা বর্তমানে বেশ বিরক্তকর অবস্থার মধ্যে আছি। তার বিষয়ে সংশ্লিট সচিব মহাদয় কে আমরা জানিয়েছি। আপনি এবিষয়ে আমাদের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের সাথে কথা বলতে পারেন। কাজী মিজানুরের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আজকের সংবাদের জানান, এবিষয়ে তিনি সরাসরি কথা বলবেন। পরবর্তীতে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো স্বাক্ষাতকার দেননি। এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমানের কাছে তার দুদকের দায়মুক্তি ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580