দেশে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের শাসন চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বল রুমে একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ‘মান্নান-নিলুফার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে ‘বেঙ্গল, দাই নেইম ইজ বিউটি’(Bengal thy name is beauty) গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০২০ সালের ৪ আগস্ট প্রয়াত হয়ে যাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ আব্দুল মান্নান তার জীবদ্দশায় কবি জীবনান্দ দাশের ‘রুপসী বাংলা’ কবিতার এই কাব্য গ্রন্থটির ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির প্রকাশক অন্য প্রকাশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন খুব দুঃসময় চলছে। এই সময়ে যখন আমাদের সৃষ্টিশীলতা ধ্বংস হচ্ছে, আমাদের সৃজনশীলতা ধ্বংস হচ্ছে, আমাদের সমস্ত মুক্ত চিন্তাকে আবদ্ধ করা হচ্ছে। যখন আমরা কথা বলতে পারি না, যখন আমরা লিখতে পারি না। এককথায় কবিতা-কাব্য, সুকুমারবৃত্তি, শিল্প এই সব কিছু নির্বাসিত হতে চলেছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি, এই যে ভয়াবহ একটা ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন সমগ্র জাতির ওপরে। আমরা আমার প্রায় মনে এটা একটা নষ্ট সময় আমরা অতিক্রম করছি।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘যখন আমাদের একজন শিশু বা কিশোর তার জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারি না, যখন আমাদের একজন মহিলা বা বালিকা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে পু্লিশের দ্বারা আক্রান্ত হয়, গ্রেপ্তার হয় বা তাকে জেলে নিয়ে যায়। সাংবাদিক নেতাদের অনেকেই শুধুমাত্র আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কারণে তাদেরকে আটক করা হয়, তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে, ফটো সাংবাদিক কাজল তার বিরুদ্ধে তিনটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ভালো ছবি, সত্য ঘটনার ছবি তুললে তাকেও পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে দেখবেন কেমন একটা অস্থিরতা এবং ভালো জিনিসগুলো তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে, অন্যায়-অসুন্দর সব কিছু যেন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’ বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আজকে ভিন্ন পরিবেশে আমরা সবাই মিলিত হয়েছি। আমরা এখানে যারা এই অনুষ্ঠানে এসেছি তার ৮০ ভাগই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতি ..। আপনি চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন সেই ক্ষমতার লড়াই, ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য যত খারাপ কাজ করা দরকার আমরা সবাই কম-বেশি করছি। এটা বাস্তবতা, এটাকে অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন প্রেসক্লাবের সামনে অথবা অন্যখানে গিয়ে ওই জোর গলায় কথা বলছি। এছাড়া আর অন্য কোনো উপায় নেই। আরও জোরে বলতে হবে, সোচ্চার হয়ে বলতে হবে এবং আমাদের আব্দুল মান্নান সাহেবের মতো সুস্পষ্টভাবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মানুষের কথা মানুষের সামনে বলতে হবে।’ প্রয়াত আব্দুল মান্নানকে একজন ‘অসাধারণ’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. মাহমুদ শাহ কোরেশি, নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালন কবি আবদুল হাই সিকদার, গবেষক মাহবুব হাসান, নর্দান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আরিফ রহমান ও প্রয়াত লেখক আব্দুল হান্নানের মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান বক্তব্য দেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি স্বাগত বক্তব্য দেন মেহনাজ মান্নানের স্বামী ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান ওমর, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদী লুনা, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, আসাদুজ্জামান আসাদ, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রেহানা আখতার রানু, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, আকরামুল হাসান, অঙ্গসংগঠনের হেলেন জেরিন খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।