রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতামত, সুপারিশ, প্রস্তাব নেবে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রস্তাব কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে ১০টি নাম প্রস্তাব করবে। গতকাল কমিটির প্রথম বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রথম বৈঠকের পর গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ থাকা এই অনুসন্ধান কমিটি এই সময়ের মধ্যে আরো তিনটি বৈঠক করবে বলে জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রথম বৈঠকের পর অনুসন্ধান কমিটির কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কমিটির ১৫ দিন মেয়াদ আছে। এর আগেই কমিটি নাম প্রস্তাব করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ’অনুসন্ধান কমিটির মেয়াদ ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুসন্ধান কমিটি নাম প্রস্তাবের বাধ্যবাধকতা আছে কি না—জানতে চাইলে সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি, এটিও আমরা দেখব। ওই রকম (বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে) বাধ্যবাধকতা থাকলে এর মধ্যেই নাম প্রস্তাব করা হবে। ’
সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কাছ থেকেও আমরা প্রস্তাব চাইব। তাদের কোনো পছন্দ আছে কি না। আজই মন্ত্রিপরিষদের ওয়েবসাইট থেকে বা মেইলের মাধ্যমে এই নোটিশ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কেউ ব্যক্তিগতভাবে চাইলেও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। ’ আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুসন্ধান কমিটি দ্বিতীয় বৈঠকে বসবে জানিয়ে সচিব বলেন, এরপর শনিবার ও রবিবার আরো দুটি বৈঠক করা হবে সুধীসমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। তাঁদের কোনো পরামর্শ বা প্রস্তাব থাকলে, তা নেওয়া হবে। তারপর সবার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও অন্যান্য বিষয় দেখে আইনে যেভাবে যোগ্যতার কথা বলা আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আইন অনুযায়ী বাছাই করে পাঁচজনের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় নতুন ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির প্রথম বৈঠকে বসে। আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বৈঠকে অংশ নেন। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এই কমিটি নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। সেই নাম থেকে বাছাই করে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নতুন সেই ইসির পরিচালনায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে।
১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নাম আহ্বান : গতকাল রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো অনধিক ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে পারবে। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্রহী ব্যক্তি তাঁদের নিজ নিজ নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্তসহ প্রস্তাবিত নাম সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বা এই বিভাগের ই-মেইলে পাঠানো যাবে।