আশীষ কুমার দে: নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের দু’জন শিপ সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) ও রেজিস্ট্রেশনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি এখনও কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও দীর্ঘ ৩০ কার্যদিবসেও তা দেয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্তদের রক্ষায় একটি মহল বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। ওই মহলের প্রভাবে তাঁদেরকে রক্ষার জন্য তদন্তের নামে কালক্ষেপন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ব্যস্ততার কারণে তাঁরা এখনও কাজ শেষ করতে পারেননি। অভিযুক্তদের বক্তব্য গ্রহণ ছাড়াও ইতোমধ্যে খুলনায় ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার কার্যালয় পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যালোচনা করেছেন এবং আজকালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। এরপর চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা হলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের ‘ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ মাহবুবুর রশিদ মুন্না (বর্তমানে ঢাকার সদরঘাট কার্যালয়ে কর্মরত) এবং নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ‘ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ শাহরিয়ার হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক ও অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম সোহেল তাঁদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত বছরের ৯ নভেম্বর নৌ পরিবহন সচিবকে চিঠি লেখেন। কমিশনের সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে চিঠিতে নৌসচিবকে জানানো হয়। দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য নৌ মন্ত্রণালয় গত ১৩ ডিসেম্বর নৌ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়। এরপর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত চার সদস্যের কমিটির অন্য তিনজন হলেন একই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার ওবায়েদ উল্লাহ ইবনে বশির, নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন কাজী মুহাম্মদ আহসান এবং প্রসিকিউটিং অফিসার বেল্লাল হোসাইন। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সার্ভেয়াররা সব কর্মদিবসে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও নিয়ম লঙ্ঘন করে কাগজে-কলমে নৌযান সার্ভে করছেন। নৌযান সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশনে সার্ভেয়ারদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা না দিলে নৌযানমালিকরা হয়রানির শিকার হন। তবে দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নৌযান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন সনদ পাওয়া যায়। এভাবে এ দুই কর্মকর্তা প্রতি মাসে অবৈধভাবে প্রচুর টাকা আয় করছেন। সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ মুন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, খুলনার সার্ভেয়ার কাগজে-কলমে দৈনিক গড়ে ২০টি নৌযান সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন করেছেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী একজন সার্ভেয়ার দিনে সর্বোচ্চ ১০টি নৌযান সার্ভে করতে পারেন। নৌযানের আয়তন ও শ্রেণিভেদে প্রতি নৌযান রেজিস্ট্রেশন বাবদ এক থেকে তিন লাখ টাকা এবং সার্ভে বাবদ নৌযানপ্রতি ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। লিখিত অভিযোগপত্রে নারায়ণগঞ্জের সার্ভেয়ার শাহরিয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বলা হয়, তিনি ঢাকা থেকে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে অফিস করেন। কোনো কর্মদিবসেই তিনি দুপুর ২টার আগে সেখানে যান না এবং বিকেল ৫টার পরপরই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। অথচ কাগজে-কলমে প্রতিদিন গড়ে ১০টি নৌযান সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন করছেন। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত দুই শিপ সার্ভেয়ারকে গত ১১ জানুয়ারি তলব করে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল। ওই সময় তদন্ত কমিটি অভিযোগের বিষয়ে তাদের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশ্ন করে। এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পরবর্তী সপ্তাহে ফের তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল ওই দুই কর্মকর্তাকে। এছাড়া লিখিত বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় পুনরায় বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল। এরপর তদন্ত কমিটি ওই দুই সার্ভেয়ারের কর্মস্থল খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় পরিদর্শন এবং অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নথিপত্র এবং তাঁদের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন দেয়া কিছু নৌযান সরেজমিন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নৌ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবীর বলেন, ব্যস্ততার কারণে এখনও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি। তবে আমরা ইতোমধ্যে খুলনা কার্যালয়ে গিয়ে নথিপত্র পরীক্ষা করেছি এবং আজকালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় পরিদর্শন করবো। চলতি সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান মনজুরুল কবীর।