প্রমানীত জাল সার্টিফিকেটের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার অভিয়োগ উঠেছে বাংলাদেশ পরমাণুশক্তি কমিশনের চলতি দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মো: সানোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে। জানা যায়, কমিশনে কর্মরত তিন জন কর্মকর্তা জাল সার্টিফিকেটে চাকুরি করছেন এমন অভিযোগ ছিলো। এ তিনজন কর্মকর্তা হচ্ছেন উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: হারুনুর রশীদ খান, (২) প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান ও (৩) আফরোজা সুলতানা। এরা সকলেই কমিশনের চলতি দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ডা. মো: সানোয়ার হোসেন এর একান্ত লোক হওয়ায় এদের জাল সার্টিফিকেট বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, উক্ত কর্মকতারা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বলে চাকুরি করে আসছিলো। কিন্তু সে সার্টিফিকেট অবৈধ ও জাল হিসেবে অভিযুক্ত।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট কোন প্রতিষ্ঠানেই স্বীকৃত নয়। কারণ এখানকার সার্টিফিকেট কেনা বেচার কাহিনী প্রচারের পর এ প্রতিষ্ঠানের দেয়া সার্টিফিকেটকে আর কোথায়ও স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কশিনের চকুরির প্রবিধানমালা ৩৩ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, মূখ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পাওয়ার শর্ত হলো প্রার্থীকে অবশ্যই এম,এ পাস করার বৈধ সনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু তারা এম,এ পাস না করায় অবৈধ পন্থা বেছে নেন পদোন্নতির ক্ষেত্রে। কাঙ্খিত পদোন্নতি পেতে তারা একযোগে দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জাল করে কমিশনে জমা দেন। হারুনর রশীদ খান উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে মূখ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য তিনি জাল সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেছেন।
কেননা, মূখ্য প্রশাসনিক পদটি উপ-সচিবের সম পর্যায়। কিন্তু বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ/জাল সনদকে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি বোর্ড সভায় সম্প্রতি পাশ করিয়ে নিয়েছেন। যদিও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার লিখিত পত্রের জবাবে জানিয়েছে যে, মো: হারুনুর রশীদ খান উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, (২) মো: মনিরুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (৩) আফরোজা সুলতানা, প্রশাসনিক কর্মকর্তার যে সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেছেন সেটি দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যালয় প্রদান করেনি এবং তারা কোন কালে এই বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন না। অথচ, কমিশনের ২জন জ্যেষ্ঠ সদস্য এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করলেও তাতে কোন প্রকার পাত্তা দেয়নি চেয়ারম্যান।
বোর্ডে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট স্বীকৃতির বিপক্ষে ঐ দু সদস্য ভোট দিলেও পরে চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে সে দু’সদস্যকে আবারো ভোট দিতে বাধ্য করেন বলে জানা গেছে। এইছাড়াও চেয়ারম্যানের এককভাবে ভোট সভায় তার নিজের ২টি ভোট থাকায় তিনি অবৈধ সার্টিফিকেট ধারিদেও পক্ষে সে প্রভাব খাটান। এ দিকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে চলতি দায়িত্ব পালন কালিন সময় নির্ধারিত সময়ের বেশী অতিরিক্ত দু মাস অতিক্রমের পূর্বে সংশ্লিষ্ট পদোন্নতি কমিটি/বোর্ডের অনুমোদনের জন্য পেশ করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কিন্তু সে নিয়মকে থোড়াই কেয়ার করে চেয়ারম্যান প্রায় ২ বছর চলতি দায়িত্বে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর চলতি দায়িত্বে থেকেই তিনি অবৈধ বা জাল সনদেও স্বীকৃতি দিলেন।
যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ দিকে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান সম্প্রতি অতি তড়িঘড়ে করে এখানে ডাক্তার নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ৩/১২/২০২১ তারিখে এ জন্য নিয়োগ এর পরীক্ষার দিন ধার্য করেছেন তিনি। সূত্র মতে, আপন মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা পাকা পোক্ত করতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। উল্লেখ্য, দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেয়া অধ্যাপক ডা: মো: সানোয়ার হোসেন ওরফে মজিবর এক সময় লজিং থেকে পড়ালেখা করেছেন। শ^শুড়ের টাকায় তিনি ডাক্তার হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে কমিশনে চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন সেন্টারে লোক নিয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে কোটি পতি বনে গেছেন।
শ্যামলীতে স্পেশালাইজড হাসপাতালের মালিকানার অন্যতম অংশীদার তিনি। এছাড়াও তিনি প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে সম্প্রতি সাভারের সুপার ক্লিনিক এর মালিকানারও অংশীদারিত্ব নিয়েছেন। মিরপুর টোলারবাগে শ^শুরের দেয়া জমিতে বাড়ি নির্মান ছাড়াও পাশেই নিজের টাকায় জায়গা কিনে আলিশান বাড়ি নির্মান করেছেন তিনি। তার অর্থ কামানোর কাজে প্রধান সহযোগি হলেন মো: হারুনুর রশীদ খান। এ জন্যই মো: হারুনুর রশীদ খানের সার্টিফিকেট জাল নিশ্চিত জেনেও তার পদোন্নতি দেওয়ার জন্য অন্য মেম্বারদের চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানা যায়।
কমিশনের চলতি দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান মো. সানোয়ার হোসেন ওরফে মজিবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ইনমাস) এ কর্মরত থাকাকালে তার সহকর্মী ডা: ফাতিমা বেগম একটি কনফারেন্সে একসাথে বিদেশে যান। সেখানে কমিশনের বর্তমানে চেয়ারম্যানে দায়িত্বে থাকা মো. সানোয়ার হোসেন মজিবর ডাঃ ফাতেমা বেগমকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদূষী ও সতীসাধ্বী ডাক্তার ফাতেমা বেগমের খান্দানী রক্ত সানোয়ারের এহেন নষ্ট চরিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠে। দেশে ফিরে ডা: ফাতেমা বেগম পরমাণু শক্তি কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড: সি.এস.করিম এর কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। কিন্তু সানোয়ারের প্রভাবের কারণে বিচার নিয়ে চলে প্রহসন।
এ অবস্থায় ডা: ফাতিমা বেগম কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সিএস করিমের রুমে সানোয়ারকে সবার সামনে তার মুখে জুতা পেটা করেন। তখন এই রুমেই কেউ কেউ বলে উঠেন লাম্পট্যের বিচার এভাবেই করতে হয়। তার ডা: ফাতেমা বেগমের শরীরে ব্লু ব্লাড বলেই তিনি উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে চেয়ারম্যান কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।