বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে এ বছর বেশ পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে। মহান আল্লাহর সৃষ্টির এই অপরূপ নিদর্শন দেখার জন্য অনেকেই এসব জেলায় ভিড় করছে। মহান আল্লাহর এসব মাখলুকের মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) জমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং এর মধ্যে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি প্রত্যেক ফল সৃষ্টি করেছেন দুই ধরনের। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এতে অবশ্যই চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ৩)
পাহাড়ও মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। পাহাড়ের সৌন্দর্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাহাড়ের ওজন স্থাপন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে পৃথিবী নড়াচড়া করতে না পারে। পৃথিবী নড়াচড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারীদের পৃথিবীতে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এ বিষয়ে কোরআন বলছে, ‘আমি জমিনের ওপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদের নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে…।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩১)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আর (আমি) পর্বতসমূহকে পেরেক (স্বরূপ সৃষ্টি করিনি?)। (সুরা : নাবা, আয়াত : ৭)
পবিত্র কোরআনের এই এক সময় অনেকেই বুঝতে পারেনি, তাই তারা কোরআন সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু বিজ্ঞানের যুগে এসে বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
আধুনিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডা. ফ্রাংক প্রেস সর্বপ্রথম বলেছিলেন, পর্বতের অত্যন্ত গভীর শিকড় আছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। সত্যিকার অর্থে পর্বত একটি ভাসমান বরফ বা খুঁটির মতো, যার ৯০ শতাংশ থাকে পানির নিচে আর ১০ শতাংশ থাকে ওপরে। (হারুন ইয়াহইয়া ডটকম)
পর্বতমালা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর পর্বতসমূহকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৩২)
কোরআনে উল্লিখিত দাবিটি আরো ভালোভাবে বুঝতে হিমালয় পর্বত নিয়ে প্রকাশিত গবেষণাটিও কাজে আসতে পারে। লাইভ সায়েন্স অনলাইন নামক একটি সায়েন্স জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীতে সাগর-মহাসাগর ও পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনে অনবরত গবেষণা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে ভূগর্ভস্থ প্রস্তরময় দুটি প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূপৃষ্ঠ স্ফীত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি। হিমালয় পর্বতমালা এর অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু ভূগর্ভের ঠিক কতটা নিচে দুই প্লেটের ওই সংঘর্ষ হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি এত দিন। তবে নতুন এক গবেষণায় ভূতাত্ত্বিকরা সেই গভীরতা নির্দিষ্ট করেছেন, যাকে তাঁরা হিমালয়ের ভিত্তিমূল হিসেবে দাবি করছেন। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ৯ কোটি বছর আগে জ্বলন্ত কোরকের ওপর ভেসে বেড়ানো দুটি প্রস্তরময় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষস্থল ছিল আজকের ভারত ও এশীয় অঞ্চলের ভূগর্ভ। ওই সংঘর্ষের ফল হিমালয় পর্বতমালা। নতুন গবেষণার ফলাফলের বরাত দিয়ে জিওলজি সাময়িকীর মে মাসের সংস্করণে বলা হয়, ভূগর্ভে বৃহত্তর এশীয় প্লেটের চাপে ভারতীয় প্লেটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ১৫৫ মাইল নিচে চলে যায়। আগে দুই প্লেটের সংঘর্ষস্থলের যে গভীরতা ধারণা করা হতো, তার চেয়ে নতুন হিসাবের গভীরতার মাত্রা দ্বিগুণ। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারের অঞ্জু পাণ্ডে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ ওই ওলটপালট যে হিমালয়ের এত নিচে সংঘটিত হয়, তা এর আগে কখনো জানা যায়নি।’ পাণ্ডে ও তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, ওই সংঘর্ষস্থলেই হিমালয়ের মূল ভিত রচিত হয়। সংঘর্ষের ফলে পাথর ও মেজরাইট নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থের সংমিশ্রণে নতুন একটি স্তর তৈরি হয়। ওই স্তরের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়। (সূত্র : লাইভ সায়েন্স অনলাইন)
এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মাঝে বান্দার জন্য বহু নিদর্শন রেখে দেন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে বেশি বেশি তাঁর শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন