ভূমিহীন হওয়ার জটিলতার রেশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবশেষে চাকনি পেয়েছেন বরগুনার বেতাগী সেই সজল। তবে চাকরির ফাইনাল পুলিশ ভেরিফিকেশনে লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন বেতাগী থানায় দায়িত্বরত এসআই হারুন অর-রশিদ। এ ঘটনায় চিন্তিত সজলের পরিবার।
সজলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তাঁর এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতার মারফতে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন বেতাগী থানার এসআই মো. হারুন অর-রশিদ ফরাজী। পরে সজলের বাবা বেতাগী থানায় পুলিশ ট্রেনিংয়ের যোগদানের নোটিশপত্র আনতে গেলে তার কাছে পরিমাণ কমিয়ে সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন এসআই হারুন। বলেন, খরচ না পেলে (৫০ হাজার টাকা ঘুষ) ভেরিফিকেশনে সমস্যা হবে কিন্তু।
সজলের বাবা অমল কর্মকার বলেন, এসআই হারুন স্যারের এমন প্রশ্নে আমি বলি, টাকার ব্যাপারে হোসনাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান রিপন কথা বলবে। আমি টাকা পাবো কোথায়? জানেনই তো, কত জটিলতা কাটিয়ে ছেলে সজলের চাকরি হয়েছে। পরে এসআই হারুন স্যার বলেন, আপনি ব্যবস্থা করেন, টাকা কি তারা দেবে? পরে আমি বলে এসেছি স্যার আপনি কাগজপত্র পাঠান। আমার নিজের সামর্থ্য নেই, আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানাবো।’
সজলের চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রথম থেকেই সংবাদ প্রচার করে আসে ‘কালের কন্ঠ’।খোঁজখবর রাখে সজলের পরিবারের। চাকরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় ধারাবাহিক সংবাদ। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসলে চাকরি পান সজল। ইতোমধ্যে পুলিশ ট্রেনিংয়ের যোগাদানপত্রের নোটিশ হাতে পেয়ে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে বরগুনা পুলিশ লাইনে উপস্থিত হয়েছেন সজল।
এদিকে চাকরির ভেরিফিকেশনে ঘুষ বানিজ্যের গুঞ্জন ওঠে সজলের এলাকায়। কালের কন্ঠের অনুসন্ধানে হাতে পান নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসআই হারুনের ঘুষ দাবীর ব্যাপারে খোঁজ নিলে মুখ খোলেন ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান এবং ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।
এ ঘটনায় হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.খলিলুর রহমান খাঁন বলেন, ‘শুরু থেকেই এক লক্ষ টাকা চাচ্ছেন বেতাগী থানার এসআই হারুন। চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর বারবার ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিতে বলতেছে। আমি একজন চেয়ারম্যান হিসেবে কিভাবে এই টাকা এনে দেই। ওদের পরিবার যথেষ্ট অস্বচ্ছল। টাকা পাবেই বা কোথায়? আপনারা সাংবাদিকরা দেখেন কথা বলে কিভাবে কি করা যায়। এ নিয়ে ফোনে না সামনা সামনি কথা বলবো।’
হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘সজলের পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় চাকরি হবে না শুনে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে আমি নিজেই ২ শতাংশ জমি দান করেছি। এখন আমাকেই এসআই হারুন বলেন, সজলের পরিবারের সাথে কথা বলে অত্যন্ত ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিতে। তা না হলে ফাইনাল ভেরিফিকেশন আটকে দিবেন বলেও জানান তিনি।’
এদিকে সজলের বাবা অমল কর্মকার আরো বলেন, নানা সমস্যার মধ্যে ছেলে সজলের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে। ঘুষও দিতে পারবো না।কারো কাছে অভিযোগও তো দিতে পারবো না। কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কল করা হলে বেতাগী থানার এসআই হারুন অর-রশিদ ফরাজী সব শুনে বলেন, ‘আমি গাড়িতে আছি পরে এ নিয়ে কথা হবে। আমি খুব ব্যস্ত। পরে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
বেতাগী থানার ওসি মো.শাহআলম হাওলাদার বলেন, এমনটি যদি করে থাকেন তবে এসআই হারুন অন্যায় করেছেন। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ভেরিফিকেশনে ঘুষ দাবি করে তিনি মারাত্মক অন্যায় করেছেন। তাছাড়া সজলের চাকরিটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।’
বরগুনা পুলিশ সুপার মো.জাহাঙ্গীর আলম মল্লিক বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’