প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের সুন্দর জীবন চেয়েছিলেন। সহায়-সম্বলহীন, অসহায়, বঞ্চিত ভাগ্যহারা-হতভাগ্যদের সহায় হতে চেয়ে ছিলেন। তিনি বলতেন যে এদেশে মানুষ যদি অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান পায়, চিকিৎসা পায়, শিক্ষা পায় তাহলেই তার জীবনটা সার্থক। তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। তার পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের দৃঢ়তায় ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। কাজেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সবরকম পদক্ষেপ আমরা নিয়ে যাচ্ছি এবং সমস্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে রেখে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্ন পূরণ হবে।
বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২১ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকার প্রধান একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দাদা-দাদি বাবাকে খোকা বলেই ডাকতেন। তাদের কাছে খোকা এতই প্রিয় ছিল যে খোকার কোনও আবদার তারা কখনও না করেননি। এই যে মানুষকে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার যে একটা মানসিকতা কখনও তার বাবা-মা আমার বাবাকে বাধা দেন নাই। বরং উৎসাহ দিয়েছেন।’
জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টুঙ্গিপারার মাটিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই সবুজ শ্যামল মাটিতে, এই জায়গারই ধুলো মাটি মেখে তিনি বড় হয়েছেন। একদিকে মধুমতি নদী, আরেকদিকে পায়রা নদী। তাই তো ছোটবেলা থেকে তার জীবনে বড় হওয়ার ঘটনা গুলো দেখলে আমরা দেখবো যে তিনি কিন্তু তখন থেকেই তার ভেতরে মানুষের প্রতি দেশের প্রতি একটা ভালোবাসা ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একটা চিন্তাই করেছিলেন, কীভাবে এদেশের মানুষের জীবনটাকে উন্নত করা যায়। মানুষের জীবনটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য ছিল। আমি তার লেখায় এবং সব সময় তার কাছ থেকে যে কথাটা শুনেছি যে এদেশের মানুষ যারা একেবারেই ভাগ্যহারা হতভাগ্য তাদের জীবনটা কীভাবে সুন্দর করবেন সে চিন্তাটাই তিনি করতেন। তিনি বলতেন, যে এদেশে মানুষ যদি অন্ন পায় বস্ত্র পায় বাসস্থান পায় চিকিৎসা পায়, শিক্ষা পায় তাহলেই তার জীবনটা সার্থক। সে কারণে তার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সাহায্য করার একটা মানসিকতা ছিল। স্কুল জীবনে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে মুষ্টিভিক্ষা করে ধান-চাল সংগ্রহ করে সেগুলি দরিদ্র ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তাদের খাবারের ব্যবস্থা বই কেনার ব্যবস্থা কাপড় কেনার ব্যবস্থা করে দিতেন।
শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট্ট সোনা বন্ধুরা তোমরা বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনী বই পড়ে দেখবে অনেক সময় কেউ কেউ আমার দাদাকে বলেছেন আপনার ছেলে কী করছেন, আপনার ছেলে তো জেলে যাবে আমার দাদার কথা ছিল আমার ছেলে তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে, সে যেটা করেছে ভালোর জন্য করছে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। ঘরের ভাত খায় না হয় জেলের ভাত খাবে কিন্তু সে তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।’
দেশ স্বাধীন করার পরে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন করে দেন। শিশুদের ভালো দেখাশোনা যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তিনি শিশুদের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিশু কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার। কারণ আমাদের দেশে যুদ্ধে অনেক শিশু যখন তারা পিতা-মাতা হারায় আবার অনেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয় বাণিজ্যেতে মা-বোনদের অনেক শিশুর জন্ম নেয়। সেই শিশুদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা তাদেরকে পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা ও তিনি শুরু করেছিলেন। তিনি সবসময় এটাই ভাবতেন যে শিশুরা এতে ভবিষ্যত। শিশুদের তিনি এত ভালোবাসতেন বলেই আমরা জাতির পিতার জন্মদিনটাকে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। ছোট্ট সোনামনির তোমরা ঘরে বসে পড়াশোনা করো এবং সেই সঙ্গে খেলাধুলাও করবে। কারণ আমরা এটাই চাই খেলাধুলা সংস্কৃতির চর্চা এগুলি একান্তভাবে অপরিহার্য। ছোট্ট সোনামনি তোমাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা মানা অভিভাবকদের কথা শোনা শিক্ষকদের কথা শোনা, শিক্ষকদের কথা মেনে চলা এটা কিন্তু খুব দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি এখানে বসে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সবরকম পদক্ষেপ আমরা নিয়ে যাচ্ছি এবং সব নীতিমালা প্রণয়ন করে রেখে যাচ্ছি। হয়তো আমরা তার চিরদিন থাকবো না কিন্তু ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা যেন এই নীতি গুলো অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পারে সেটাই আমরা চাই।