কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ চকরিয়া ফুলছড়ি জুমনগর আশপাশ এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ নির্বিচারে ধ্বংস করে দেড়’শ একরের বেশি সরকারি জমি দখল হয়ে গেছে। এখাতে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা) ফারুক বাবুল প্রায় দেড় কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছে বলে অভিযোগ। তবে দখলবাজ চক্রের হাতে বনবিভাগ অসহায় হয়ে পড়া ও মামলা দিয়ে দায় এড়ানোর চেস্টা করছেন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক। বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় নামধারী কিছু দখলবাজরা বনবিভাগকে ম্যানেজ কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনজ সম্পদ জবরদখল করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে বিভিন্ন অর্থ বছরে বনভূমিতে সরকারী এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এসব বনায়ন সৃজন করা হয়েছিল। বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও প্রতিবারই ফের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে জবর দখলকারীরা। বনকর্মীরা জানান, সশস্ত্র পাহারায় রাখতে সন্ধ্যার পর স্থাপনাগুলো অবৈধ অস্ত্রে ভরে যায়। বনকর্মীরা প্রাণের ভয়ে কাছেও যেতে পারছে না বলে দাবী বনকর্মীদের। সূত্র জানায়, দখলবাজদের অনেকে বিভিন্ন লোকদের কাছে প্লট আকারে বিক্রি করে দিয়েছে।
ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ২০০৪-৫, ২০০৬-৭ ও ২০১৮-১৯ সালে শতশত একর বনভুমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়। এসব বনায়ন নিচিহ্ন করে সেখানে গড়ে তুলেছে ঝুপড়ি বসতবাড়ি। তবে বনভুমি বেহাত হওয়ার পেছনে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা ফারুক বাবুল ও হেডম্যান শুক্কুরের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে বনায়ন ও বনভুমি ধ্বংস করেছে তারা। বনবিভাগ লোকদেখাতে কয়েকবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। কিন্ত সেখানে পুনরায় দখলবাজ চক্র অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তুলেছে।
সুত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ফুলছড়ি জুম নগরের আশপাশ এলাকায় চন্দ্রবনিয়া ও বউ লামানির শিয়া এলাকায় ৫০ হেক্টর সামাজিক বনায়ন সৃজন করে সেই সময়ে তা বিভিন্ন ব্যক্তিকে অংশীদার করা হয়। বরাদ্দের ৪-৫ বছর যেতে না যেতেই ওইসব বনভুমির মধ্যে ৪০ হেক্টর বনায়নের গাছ অংশীদাররা সাবাড় করে তা বিক্রি করে দেয় খোদ অংশীদার এবং বমকর্মীরা। পরে বনভুমিও শতক হিসেবে বিক্রি করায় সেখানে কয়েক’শ অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। অবশিষ্ট ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের কিছু গাছ ছিল। পরে সেগুলো কেটে ২০১৭-১৮ সালে বনবিভাগ ও অংশীদাররা বিশাল অংকের রাজস্ব পায়। সফল বনায়ন স্বীকৃতি পায় ওই বনায়ন। ওই ১০ হেক্টর বনভুমিতে অংশীদারদের টাকায় দ্বিতীয় আর্বতে বনায়ন সৃজন করা হয়। কিন্তু বনবিভাগ অংশীদারদের দলিল হস্তান্তর ও বনায়ন বুঝিয়ে না দিয়ে দখলবাজদের সুযোগ করে দেয়।
১০ হেক্টর বনায়নের মধ্যে অন্তত ৪ হেক্টরে ঘরবাড়ি তৈরী হয়েছে গত বছর। বর্তমানে অবশিষ্ট ৬ হেক্টর বনবভুমিতে অনেকে দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করেছে। নির্বিচারে কেটে ফেলেছে বনায়নের চারা গাছ। এসব দখলবাজদের কাছ থেকে এফজি মহি উদ্দীনের মাধ্যমে দফায় দফায় টাকা উত্তোলন করেছে। এছাড়াও সরাসরি দখলবাজরাও ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক বাবুলের সাথে নগদ টাকা লেনদেন করছে বলে অভিযোগ। বনবিট কর্মকর্তা থেকে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে ফারুক বাবুল সরকারের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। জানা গেছে, ফুলছড়ি বনবিটের বিভিন্ন সময়ে বনভুমি দখল, প্লট আকারে বিক্রিকারীদের বিষয়ে বনবিভাগ ১০/১২টি লোকদেখানো মামলা করে দায় সেরেছেন।
বনায়ন ধ্বংস, গাছ পাচার, বনভুমি দখল ও বিক্রিসহ নানান দুর্নীতিতে বনবিট কর্মকর্তা ফারুক আহমদ বাবুলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তোলা হয়েছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক বাবুল গত ৬/৭ মাসে অন্তত কোটি টাকার বনভুমি বিক্রি করেছে। আর বনের জমিতে কাচা পাকা ঘর নির্মাণে সরাসরি সহযোগীতা দিয়ে অবৈধ আয় করেছে আরো অর্ধকোটি টাকা। তবে, এব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, যারা অবৈধভাবে বনায়ন ও বনভুমি দখল করেছেন, তারা যে দলেরই হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, ফুলছড়ি রেঞ্জ ও বনবিটের অধীনে সামাজিক বনায়ন দখলবাজদের বিরুদ্ধে ১০/১২ টি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলাগুলো দায়ের করে দায় এড়াচ্ছে বনবিভাগ। এসব বন মামলাগুলো নিয়েও উঠছে নানা কথা।ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তার ও বনকর্মীদের খামখেয়ালিপনায় বন বিভাগের অনেক মামলার হেরে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। গাফিলতি বা যথাযথ তদারকির অভাবেই বন বিভাগ অনেক মামলায় ইতোপূর্বে হেরেছে।
বন বিভাগ মামলায় হারের কারণে বনভূমি বেহাত হচ্ছে। বন বিভাগের হিসাবে ফুলছড়ি রেঞ্জেই ৬/৭ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশ সংরক্ষিত বনের জমি। বনের জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে ঘরবাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।তবে, আইনজীবীদের মতে, বন বিভাগ হারতে চায় বলেই বনের জমির মামলায় হারে। এর পেছনে দুর্নীতি ও যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, ফুলছড়ি জুম নগর ২০১৮-১৯ সালের সামাজিক বনায়নের ভিতর অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে খুঁটি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি।
রিজার্ভ ফরেস্টের আওতার এবং সংরক্ষিত বনায়নের ভিতর গড়ে তোলা অবৈধ দখলদারদের কাচা বাড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধা করে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক বাবুল। তবে, এ প্রসংগে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বন বিভাগের ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত যেন সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া না হয় সে বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছিল। এরপরে রিজার্ভ ফরেস্টের আওতায় এবং সংরক্ষিত বনায়নের ভিতর বিদ্যুৎ সংযোগের চেস্টার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এব্যাপারে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা) ফারুক বাবুল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বনভুমি দখল ও বনায়ন ধ্বংসে কথা স্বীকার করে বলেন, দখলদার ও বনায়ন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছি।