বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

বন ভবনের সংস্থাপন শাখার করণিক শাহজানের দাপট চরমে

বিশেষ প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২
  • ৩৬১ পাঠক পড়েছে

বন ভবনের সংস্থাপন শাখার করণিক শাহজানের দাপট চরমে
সিসিএফ’র ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে মাঠ পর্যায়ে ঢালাও চাঁদাবাজি

বন ভবনে কর্মরত এক দুর্দান্ত প্রতাপশালী কেরানির হাতে গোটা বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা দীর্ঘ দিন ধরে জিম্মি হয়ে আছে। নিজেকে খোদ প্রধান বন সংরক্ষকের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভূয়া অজুহাতে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মাসিক কয়েক লক্ষ টাকা নজরানা আদায় করলেও থেকে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

প্রভাবশালী এই কেরানীর নাম মোঃ শাহজাহান। যিনি উচ্চমান সহকারী হিসেবে দীর্ঘ এক যুগ অধিককাল সময় ধরে বন ভবনে কর্মরত থেকে বিভিন্ন কৌশলে নিম্ন পর্যায়ের বন কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইলিং করে কোটিপতি হয়েছেন। টাঙ্গাইল শহরে বিশাল অট্টালিকা ও স্বজনদের নামে বেশ কয়েক একর জমি ক্রয় সহ বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর ও করেছেন তিনি। তার হাতে নিগৃহীত মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে লোভনীয় প্রায় ২০টি বন বিভাগে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার তাকে মাসিক ৫/১০ হাজার টাকা করে সম্মানী দিতে বাধ্য হন।

শতাধিক ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার এই সম্মানী দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। কেউ এই সম্মানীর টাকা দিতে দেরি হলে তাকে ফোন করে জানানো হয় আপনার খারাপ জায়গায় বদলি হচ্ছে, আমি সিসিএফ সাহেবকে দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছি, আবার কখনো বলেন আপনার বিরুদ্ধে সিসিএফ সাহেবের কাছে দুর্নীতি অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ আসছে, আমি ঠেকিয়ে রেখেছি, যোগাযোগ করেন সহ বিভিন্ন ছলচাতুরি করে মাঝে মধ্যে মোটা অংকের টাকাও আদায় করেন বলেও সূত্র জানায়।

বন ভবনের এক কর্মচারী জানান, ডাকযোগে আগত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্বলিত চিঠি আসলেই এই উচ্চমান সহকারি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। শুরু করেন মোবাইলে দেন দরবার। আবার কোন সংবাদপত্রে বনবিভাগের কারো বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলে ঐ সংবাদপত্রটিও তিনি মূল ভবনের গেটে ডিউটিরতদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এমনকি তাদের মৌখিক নির্দেশ ও দিয়ে রেখেছেন কোন সংবাদপত্র বা চিঠি তাকে না দেখিয়ে যেন কোনো কর্মকর্তার টেবিলে না দেয়া হয়। ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি গোচর না হওয়ায় অনেক ঘটনায় থেকে যায় তাদের অজানা। আবার মাঠ পর্যায়ের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জারদের সাথে তিনি ছোট ভাই, ভাগ্নে, মামা বিভিন্ন সম্মোধন করে কথা বলায় তার আশে পাশে থাকা লোকজন ও সহজে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না। আবার অনেক ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা এই করণিকের সাথে সখ্যতার কারণে ও ড্যামকেয়ার ভাব প্রদর্শন করে থাকেন।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি সার্কেলে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জারদের সাথেই তার বেশী সখ্যতা। এর মধ্যে ২/১ জন কর্মকর্তা আবার অফিসে আগুন্তকদের বা স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের সাথে আলাপকালে দম্ভ করে এই করণিকের ভাগ্নে, কাজিন বা ভাই পরিচয় দিয়ে থাকেন। বলে থাকেন তার বিরুদ্ধে লিখলে বা লিখিত অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না। চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের দোহাজারী রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিকদার আতিক নিজেকে করনিক শাহজানের আপন ভাইগ্না পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ৪টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ নির্বিচারে নিধন ও পাচারে সহযোগিতাসহ সুফর প্রকল্পের মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করেও বহাল রয়েছেন।

রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, টেকনাফ রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অনেকেই তাকে কাজিন বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। ফলে মাঠ পর্যায়েও এই করণিকের দাপটে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এই করণিকের ব্যবহৃত ২টি মোবাইলে আগত কথোপকথন ও বিকাশ, নগদ, সুন্দরবন কুরিয়ার ও এসএ পরিবহনের মাধ্যমে আগত টাকার পরিমাণ তল্লাশী চালালে এর সত্যতা মিলবে বলেও সূত্র জানায়। তিনি সংস্থাপন শাখার উচ্চমান সহকারী বিধায় বদলী-নিয়োগ ফাইল তার কাছেই থাকে তাই সংশ্লিষ্ট সকলেই তার কাছে জিম্মি।

পাশাপাশি সংস্থাপনের দায়িত্বে থাকায় সিসিএফ মহোদয়ের কক্ষে অবারিত যাতায়াতের কারণে তিনি নিজেকে বিশাল ক্ষমতাধর ও সিসিএফ সাহেবের খোদলোক বলে নিজেকে জাহির করে থাকেন। বন ভবনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের এহেন মানষিক ও আর্থিক নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে অবিলম্বে এই করনিককে অন্যত্রে বদলী করা প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগী মহল মনে করেন। এ ব্যাপারে করণিক শাহাজানের সাথে মোবাইলে আলাপকালে তিনি বলেন লিখে লাভ নেই, আমার অফিসে আসেন চা খাবেন। উত্থাপিত অভিযোগ সংক্রান্তে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580