করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন করতে যাচ্ছে সরকার। শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণার পর রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
যাত্রীরা জানান, আগামী সোমবার থেকে লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তাই এখন বাড়ি না গেলে রাজধানীতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগেভাগে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
শনিবার বিকেলে মহাখালী, গাবতলি, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভির দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, সিএনজি, রিকশায় করে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুরসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা মহাখালী বাস টার্মিনালে। নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটে নিজ গন্তব্যে বাসে উঠছেন তারা।
মোহাম্মদপুর একটি মেসে থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শামীম আহমেদ। লকডাউন ঘোষণার পরপরই ব্যাগ গুছিয়ে তিনি মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে চলে আসেন। যাবেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। শামীম বলেন, তিনি দুইটা টিউশনি করে ঢাকা শহরে নিজের খরচ চালান। কিন্তু লকডাউনে সেই টিউশনিতে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই আগেভাগে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন তিনি।
মিরপুরের শাহ আলীবাগে পরিবার নিয়ে থাকেন জামালপুরের শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী সোমবার তার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সবাইকে নিয়ে বাড়ি রওনা হয়েছেন। আজ যেতে না পারলে আগামীকাল রোববার অনেক ভিড় হবে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে এনা পরিবহন। এই পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রি করেন সাহেদ আলী। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে গত কয়েকদিন ধরে বাসের অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এতে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। আজ লকডাউন ঘোষণার পর তুলনামূলকভাবে যাত্রীও বেশি আসা শুরু করেছে। কাল রোববার ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
লকডাউনের ঘোষণার পর থেকে ঢাকা ছাড়ছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। চাপ বেড়েছে সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে। সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
দুপুরের পর থেকেই ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে থাকে লঞ্চ ঘাটে। এক যাত্রী জানান, সোমবার থেকে লকডাউনের খবর শুনেই সদরঘাটে ছুঁটে এসেছি। সপরিবারে বাড়ি চলে যাচ্ছি।
লকডাউনের সংবাদ পেয়ে আটকে পড়ার ভয়ে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন নগরবাসী, বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন। এই সুযোগে দূরপাল্লায় বাসভাড়া দ্বিগুণ আদায় করার খবরও পাওয়া গেছে। দুর্যোগের মধ্যে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।