রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকেই বাসের কাউন্টার গুলোতে এখন ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সবাই লকডাউনের আগে ঘরে ফিরতে চাইছে। কিন্তু একটি টিকিটের জন্য সবাইকে এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে বাস টার্মিনাল ও গণপরিবহনে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে। উপরন্তু সরকারের নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে পরিবহন কোম্পানিগুলো।
শনিবার মধ্যরাতেও গাবতলী বাস টার্মিনালে টিকিটের জন্য মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। রাত গভীর হলেও এর রেশ কাটেনি। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে জড়ো হয়। টিকিটের জন্য বাস কোম্পানির কাউন্টারে ছুটতে দেখা যায়।
মোশারফ হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, তিনি যশোরে যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট খুঁজছেন। কিন্তু সব বাসের কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে তাদের নির্ধারিত টিকিট শেষ হয়ে গেছে।
ঈগল পরিবহনের কর্মচারী রফিকুল জানান, তাদের সব বাসের টিকিট শনিবার রাতেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর লোকজনের চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু কাউকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শ্যামলী পরিবহনের কর্মচারী হামিদ জানান, শ্যামলী পরিবহনের সব রুটের বাসের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় যাত্রীর চাপ থাকলেও টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত বাস বিভিন্ন রুটে সংযোগের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত বাস সংযোজন করা গেলেই আবার টিকিট ছাড়া হবে।
নাবিল পরিবহনের উত্তরবঙ্গগামী বাসের কোন টিকিট কাউন্টারে অবশিষ্ট নেই। এই পরিবহন কোম্পানিটি অতিরিক্ত বাস সংযোজনের চেষ্টা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একই কথা শোনা গেছে হানিফ পরিবহন ও খালেক পরিবহনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। গেছে বলে কাউন্টার ম্যানেজাররা জানিয়েছে। অতিরিক্ত বাস সংযোজনের কথা শুনে অনেকেই কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছে। এদেরই একজন সালমা খাতুন জানান, লকডাউনে গতবার আটকে পড়ার কারণে তাকে ও তার পরিবারকে অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এবার লগডাউনের কথা শুনে আগেভাগেই দেশে ফিরে যেতে চাইছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। কিন্তু বাসের টিকিট পাননি। কাউন্টারের লোকজন বলেছে দুপুরের আগেই অতিরিক্ত বাস ছাড়া হবে তখন টিকিট পাওয়ার আশায় তিনি কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
টিকিটের জন্য একই ধরনের হাহাকার দেখা গেছে রাজধানীর কল্যাণপুর, কলেজ গেট, পশ্চিম পান্থপথ, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে। এখানেও যাত্রীরা বাসের টিকিট পাচ্ছেন না। পান্থপথ শ্যামলী বাস কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, তাদের ননএসি সব রুটের বাসের টিকিট শেষ। এসি বাসের সামান্য কিছু টিকিট আছে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিটের হাহাকার না থাকলেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীরা টার্মিনালে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাস পেয়ে যাচ্ছেন। টিকিটের দরদামের পরপরই তারা দ্রুত বাসে উঠে পড়েছেন। প্রতি আধ ঘণ্টা পর পর এই টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চাপ থাকলেও ট্রাইব্যুনালে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
এনা পরিবহনের সবুজ জানান, এইটা মিনাল থেকে ১৫ মিনিট ২০ মিনিট অথবা আধাঘন্টা পর পর বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যায়। ঈদের সময় ও একইভাবে বাস ছেড়ে যায়। লকডাউনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল থেকেও এই টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। যাত্রী পাওয়ার বাস গুলো দ্রুত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি সব বাস টার্মিনাল ও গণপরিবহনে একেবারেই ভেঙে পড়েছে। যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই দেখা যায়নি। যাত্রীরা স্বাভাবিক সময়ের মতোই টার্মিনালের ঘোরাফেরা করছেন এবং যারা টিকিট পেয়েছেন তারাও বাসে উঠে বসে পড়েছেন। মাস্ক এর ব্যবহার থুতনি ও কানেই ঝুলন্ত অবস্থায় সীমাবদ্ধ ছিল। বাসের ভেতর অনেকে পাশাপাশি সিটে বসে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিধি মানার ব্যাপারে পরিবহন কোম্পানিগুলোকে দেওয়া সরকারের নির্দেশনাও কোথাও মানতে দেখা যায়নি। হ্যান্ডওয়াশ অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থাও করা হয়নি। এই অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের চেয়ে বিস্তারের সম্ভাবনাই শতভাগ জোরালো হয়েছে।
এদিকে পাশাপাশি সিটে বসানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত হারে তাদের কাছ থেকেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবহন কোম্পানির লোকজন জানাযন, একই পরিবারের লোক হওয়ায় তাদেরকে পাশাপাশি বসিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা নেই।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের জন্য সরকারের বেধে দেওয়া ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরিবর্তে পরিবহন কোম্পানিগুলো ৯০ থেকে ১০০ ভাগ ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঝালকাঠির যাত্রী সাইদুর জানান, তিনি শনিবার সকালে সাড়ে আটশ টাকা ভাড়া দিয়ে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসেছেন। রবিবার সকালে একই রুটের ভাড়ার জন্য তার কাছে তেরোশো টাকা চাওয়া হয়েছে।