বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমানো যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গতকাল হবিগঞ্জে গুলিবর্ষণ হয়েছে। এর মূল কারণ হবিগঞ্জ বিএনপির একটা শক্তিশালী জায়গা। হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দ বরাবরই প্রমাণ করেছেন, সেখানে শক্তিশালী একটা সংগঠন আছে। সে জন্য এই জায়গাতে তারা আঘাত করেছে, বিনা উসকানিতে নির্বিচারে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছে।
হবিগঞ্জে দলের পূর্বঘোষিত সমাবেশে পুলিশি হামলার ঘটনা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই— এভাবে দমনপীড়ন, হত্যা, গুম করে কখনই জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি, একটা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য তাদের অধিকার আদায়ের দাবি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এবং সবচেয়ে বড় যে দাবি নিয়ে এখন যে আমরা আন্দোলন করছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য যে আন্দোলন করছি সেই আন্দোলনকে কখনই দমন করা যাবে না।
হবিগঞ্জের বিনা উসকানিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশি হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার জন্য জেলার পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী, ওসি মাসুক আলী এবং নাজমুল হাসানকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি অবিলম্বে তাদের অপসারণ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ফখরুল জানান, হবিগঞ্জের সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণে বিএনপির ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২২ তারিখ আমরা সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সাত জেলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। এর মধ্যে ছয়টিতে মোটামোটি শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি করা গেছে। হবিগঞ্জে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এসপি মুরাদ আলীর নির্দেশে ওসি নাজমুল হাসান, মাসুক আলী সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শটগানে প্রায় ১২০০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। আইনত সারাবিশ্বে শটগানের গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
‘এতে আমাদের হবিগঞ্জের জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুর ইসলাম সেতু, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজীব আহসান রিংগন, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। সাইদুর রহমানের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল মতিন, শেখ রাসেল, গোলাম বাকী চৌধুরী রাজীব, মানিক মিয়া, তৌ্হিদুর রহমান অনি, বেলাল আহমেদ বাবু, আসিফুল ইসলাম ইমন, মুজাক্কির ইমন, গৌর চন্দ্র দাশ, মোশায়েদ আলমসহ অর্থ শতাধিক নেতাকর্মী। গ্রেফতার করা হয়েছে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের।’
হবিগঞ্জের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
কর্মসূচি
হবিগঞ্জের গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার সিলেট বিভাগের সব উপজেলা এবং শনিবার সিলেটের সব জেলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের সমাবেশে অংশ নেওয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদিন, মুক্তাদির চৌধুরী ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা তুলে ধরেন।
তারা বলেন, হবিগঞ্জের সমাবেশের জনস্রোত ঠেকাতে স্থানীয় পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য একটিই— সমাবেশ বানচাল করা। যেভাবে পুলিশ সেখানে গুলিবর্ষণ করেছে, এর ফলাফল আরও ভয়াবহ হতে পারত। এখানে লাশের সারি পড়তে পারত। আপনাদের মাধ্যমে আমরা এটি দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেল, পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক যে পরিসর, ডেমোক্রেটিক স্পেস এটাকে একেবারেই সংকুচিত করে ফেলেছে। এই কর্মসূচিগুলো একেবারেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এখন পর্যন্ত এসব কর্মসূটিতে শান্তি ব্যাহত হয়নি। অথচ তারা পরিকল্পিতভাবে এ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে আজকে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে সংকুচিত করে ফেলেছে।
‘আজকে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, এ দেশের মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছে।’
সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।